‘আমরা যারা শোবিজে কাজ করি, তাদের প্রত্যেকের জন্য নিজের আউটলুক ঠিক রাখা জরুরি। আউটলুক বলতে কেবল চেহারা বোঝায় না।
ছাত্রজীবনে ফেরদৌস সারারাত জেগে পড়াশোনা করতেন আর বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠতেন। শিল্পীজীবনের শুরুতেই এই অভ্যাসটা তিনি ত্যাগ করেছেন। একদম ত্যাগ করতে পেরেছেন বললে ভুল হবে। এখনো সপ্তাহের ছুটির দিনটা বিছানা ছাড়তে ছাড়তে বেলা গড়িয়ে যায়। তবে কাজের দিন বেশ সকাল সকাল বিছানা ছাড়েন। নিজের বডি ফিটনেসের জন্য ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করেন প্রায় ঘণ্টাখানেক। কিছু ইন্সট্রুমেন্টও তাকে সহায়তা করে। এক্সারসাইজের কিছু ইন্সট্রুমেন্ট সংগ্রহে রেখেছেন। ট্রেডমিল আর ডাম্বল ব্যবহার ছাড়া ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজের ওপরই তিনি বেশি জোর দেন বলে
জানান।
প্রতিদিন এক্সারসাইজ করা প্রসঙ্গে ফেরদৌস বললেন, আসলে সকালে এক্সারসাইজ না করে বের হলে কেন যেন আমার আলসেমি কাটতেই চায় না। এক্সারসাইজ একসঙ্গে দুইভাবে আমাকে সহায়তা করে। ফিটনেস ঠিক রাখার পাশাপাশি আলসেমি দূর করে। ফেরদৌস জানালেন, বাসায় এক্সারসাইজের পাশাপাশি সপ্তাহে কমপক্ষে দু বার তিনি জিমে যান। সন্ধ্যার পর জিমে যাওয়াটাই তার বেশি পছন্দ। জিমে গেলে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় সেখানে কাটিয়ে দেন।
শুধু এক্সারসাইজ করলেই তো চলে না, ফিটনেসের জন্য ডায়েটের ব্যাপারটাকে ফেরদৌস বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। মিস্টি আর ফাস্টফুড তার পছন্দের খাবার হলেও এখন তা এড়িয়ে চলেন। গরু বা খাসির মাংস খান খুব কম। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবজিকে প্রাধান্য দেন। ভাত বা রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট খাবার যতটা পারেন কম খান। জোর দেন প্রতিদিন ফলমূল খাওয়ার প্রতি। লাঞ্চ বা ডিনারের মেন্যুতে সালাদ রাখার চেষ্টা করেন সবসময়। ডায়েটিং প্রসঙ্গে ফেরদৌস বললেন, শোবিজে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ছাড় দিতে হয়, এর মধ্যে পছন্দের খাবার ইচ্ছেমতো খেতে না পারার কষ্টটা বড়।
সতেজ থাকার জন্য গোসলকেই গুরুত্ব দেন ফেরদৌস। গরমে বা শীতে সবঋতুতেই ঠান্ডা পানিতে দু বেলা তার গোসল চাই । সকালে বাইরে বের হবার আগে একবার আর বাইরে থেকে ফিরে একবার তিনি বেশ সময় নিয়ে গোসল করেন। শুটিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চেষ্টা করেন মেকআপ তুলে ফেলার। এ সময় ব্যবহার করেন হারবাল উপাদানে তৈরি ফেসওয়াশ। এছাড়া নিম্নমানের মেকআপ সামগ্রী এড়ানোর জন্য শুটিংয়ে নিজের মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করেন।
এমনিতে ফেরদৌস ক্যাজুয়েল থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। ফরম্যাল পোশাক পরেন কোনো পার্টি বা অনুষ্ঠানে গেলে। তবে টি-শার্ট আর জিন্স পরেই স্বাচ্ছন্দ্য পান বেশি। সাদা আর কালো রঙের পোশাকের প্রতি তার রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সিনেমা বা নাটকে ফেরদৌস নিজের পছন্দের পোশাকই বেশি ব্যবহার করেন। তবে তিনি মনে করেন সিনেমা বা নাটকে পোশাক ডিজাইনার রাখাটা জরুরি। এ বিষয়ে মুম্বাই ও কলকাতার কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, অভিনেতা বা অভিনেত্রীর কাছে পরিচালক-প্রযোজকের প্রত্যাশা থাকে চরিত্রটা সুন্দরভাবে যেন তারা ফুটিয়ে তোলেন। তাই পোশাক বা অন্য সব কিছুর জন্যই তারা রাখেন আলাদা আয়োজন। মুম্বাই বা কলকাতার প্রায় সব প্রডাকশনেই পেশাদার ড্রেস ডিজাইনাররা নায়ক-নায়িকার পোশাক ঠিক করে দেন আর তা প্রডাকশন থেকেই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ড্রেস নিয়ে ভাবতে হয় নায়ক-নায়িকারই। ফেরদৌস জানালেন, স্ক্রিপ্ট আর চরিত্রের ধরন সবার আগে বুঝে তিনি পোশাক নির্বাচন করে থাকেন। পরিচালকের সঙ্গে পোশাকের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলে নেন শুটিংয়ে যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই।
যতো ব্যস্ততার মধ্যেই থাকুন না কেনো সপ্তাহের একটা দিন ফেরদৌস পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করেন। বছরে অন্তত একবার চান পরিবারের সবাইকে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে। শুটিং বা অন্য কাজে দেশের বাইরে গেলে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য টুকিটাকি গিফট আনা তার চাই।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৫৩৫, নভেম্বর ২৭, ২০১০