ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

সেলিম আল দীন : সতীর্থদের চোখে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১০

বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান নাট্যকার সেলিম আল দীন নেই। কিন্তু রয়ে গেছে তার অমর কিছু সৃষ্টি।

সেই সৃষ্টির মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকীতে তার বন্ধু, সহকর্মী ও শুভার্থীদের কাছে এই মেধাবী নাট্যকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। কথানাট্যের জনক নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন তারা।

সেলিম আল দীন আজও আমার পাশে আছেন : নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু

সেলিম আল দীন ছিলেন আমার শিল্পসঙ্গী। বহু স্মরণীয় রাতদিন আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখতেন, আমাদের স্বপ্ন দেখাতেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা হন্যে হয়ে ছুটতাম। তার সর্বশেষ স্বপ্ন ছিল বিশ্ব সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলা। মৃত্যুশয্যায় শুয়েও তিনি আমাদের মধ্যে বিশ্ব সংস্কৃতি কেন্দ্রের স্বপ্নটির কথা আমাকে স্মরণ করিয়েছেন। ঢাকার অদূরে ধামরাইতে আমরা বিশ্ব সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কাজ করে চলেছি। আমি একটা কথা প্রায়ই ভাবি, আজকে বিশ্বনাটকে বাংলাদেশের নাটক যে  মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত,  সেলিম আল দীনের নাটক না থাকলে আমরা সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম কিনা। আমি মনে করি বন্ধু হয়ে সেলিম আল দীন আজও আমার পাশে আছেন, আজও তিনি আমার সব নাট্যকর্মের অনুপ্রেরণা।

নাট্যকারের চেয়েও যেন বেশি মাত্রায় দার্শনিকে পরিণত হয়েছিলেন : রামেন্দু মজুমদার

সেলিম আল দীন আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান নাট্যকার। তিনি আমাদের দেশে ভিন্নধারার নাটকের প্রবর্তন করেন। আজকের যে বর্ণনাত্মক রীতির নাটক, তা আমাদের এখানে তিনিই প্রথম প্রবর্তন করেন। পরে সে নাটকের ধারায় লিখতে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমার মতে, তার নাটকের সাহিত্যমূল্য অনেক। সবচেয়ে বড় কথা, আমার মনে হয়েছে সেলিম আল দীন নাট্যকারের চেয়েও যেন বেশি মাত্রায় দার্শনিকে পরিণত হয়েছিলেন। সেলিম আল দীনের সাথে আমার সম্পর্ক বলা চলে তার নাটক লেখার শুরু থেকে। তিনি আমাদের থিয়েটারচর্চার সাথে শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন।


আমাদের নাট্যসাহিত্যে তাঁর আরও অনেক দেওয়ার ছিল : আসাদুজ্জামান নূর

সেলিম আল দীন আমাদের সবারই বেশ ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার নাটক তো মূলত ‘ঢাকা থিয়েটার’ই করত, তিনি মূলত ঢাকা থিয়েটারের জন্যই নাটক লিখতেন। তিনি যখন প্রথম নাটক লেখেন, আমরা খুব চমৎকৃত হয়েছিলাম। তার নাটকের ভাষা, বিষয়, আঙ্গিকে ওই সময়ে বেশ নতুনত্ব ছিল। লোকজ ঐতিহ্য থেকে অনেক কিছু তুলে এনে তার মতো করে তিনি নাটকে ব্যবহার করেছেন। তিনি নাটকে যে আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ তার নাটকের যে প্রকাশভঙ্গি তা আমাদের দেশে এর আগে কেউ করেনি। পরে হয়তো তার দ্বারা অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে, কিন্ত তার আগে কেউ এভাবে কাজ করেনি। সেদিক থেকে বিচার করলে তিনি আমাদের নাটকে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তার মৃত্যু তো আসলে ছিল অকালমৃত্যু। বয়সে সে আমার প্রায় সমসাময়িক ছিল কিংবা ছোটও হতে পারে। তবে যেভাবে সে চলে গেল, বিষয়টা খুব অপ্রত্যাশিত। আমাদের নাট্যসাহিত্যে তার আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল।
নাটকের উপাদান সংগ্রহের জন্য সে বিভিন্ন সাধারণ মানুষের সাথে মিশত, তাদের জীবনকে পর্যবেক্ষণ করত। নিঃসন্দেহে সেলিম আল দীন বাংলা নাটকের একজন প্রতিভাবান নাট্যকার।

মানসিক উপস্থিতি আমি টের পাই : শিমূল ইউসুফ

সেলিম আল দীন নেই, এ কথা মনে হলেই বুকের ভেতরটা এখনো মোচড় দিয়ে উঠে। নিজেকে আমার বড় নিঃসঙ্গ মনে হয়। তার একেকটি নাটককে আমি একেকটি মহাকাব্য বলে মনে করি। এই মহাকাব্যিক ঢঙে নাটক লেখার ক্ষমতা বাংলাদেশে একজনেরই ছিল, তিনি সেলিম আল দীন। আমরা ছিলাম তার শিল্পসঙ্গী। শিল্পের পেছনে ছুটতে নিরন্তর আমাদের অনুপ্রাণিত করতেন তিনি। আজকে আমি অভিনয় করি, গান গাই। সৃজনশীল কাজ নিয়েই বেশিরভাগ সময় কাটাই। সেলিম আল দীন না থাকলে হয়তো আমার এই সৃজনশীল পথে হাঁটাই হতো না। সেলিম আল দীন শারীরিকভাবে নেই, কিন্তু তার মানসিক উপস্থিতি আজও আমি টের পাই।

তাঁর নাটক আমাদের জোগান দিয়েছে অদম্য সাহস : রাইসুল ইসলাম আসাদ

যখন আমার বিপথে যাওয়ার সময়, তখনই সঠিক পথের সন্ধান নিয়ে আমরা সামনে এলেন ঝাঁকড়া চুলের এক স্বপ্নদ্রষ্টা। তার তৈরি করা কিছু অমর চরিত্রে অভিনয় করেই আমার ভিতরের অভিনেতা সত্তাটি আমি উপলব্ধি করি। তার একেকটি নাটক আমাদের জোগান দিয়েছে অদম্য সাহস। বড় অসময়ে চলে গেছেন সেলিম আল দীন। আরো অনেক কিছু তাঁর দেওয়ার ছিল। আসলে সেলিম আল দীনের সঙ্গে আমি এমন সব স্মরণীয় সময় কাটিয়েছি, তা বলা স্বল্প সময়ে সম্ভব নয়। বাংলাদেশের নাটককে তিনি অনেক উঁচু জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন, আরো অনেক ওপরে নিয়ে যেতে পারতেন।
 
ভবিষ্যতেও মানুষ নতুন করে মূল্যায়ন করবে : আফজাল হোসেন

সেলিম আল দীন বাংলা ভাষার নাটকের ক্ষেত্রে যে অবদান রেখে গেছেন, সেটি এখন তো মানুষ মূল্যায়ন করছেই। ভবিষ্যতেও মানুষ নতুন করে মূল্যায়ন করবে এবং তাঁর নাটকের মধ্য থেকে, সাহিত্যের মধ্য থেকে নতুন নতুন চিন্তাকে আবিষ্কার করবে। বেদনার বিষয় হচ্ছে, তাকে খুব অল্প বয়সে চলে যেতে হয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য যে তাঁর মতো একজন নাট্যকারকে আমরা আমাদের সময়ে পেয়েছিলাম।
অবশ্য একটা মানুষ চলে গেলে, তার সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলাই হয়। কিন্তু আমি বলবো, সেলিম আল দীন কেবল জন্মদিন আর মৃত্যুদিনে স্মরণ করার বিষয় নয়, এ মুহূর্তে তার নাটকের পাঠ ও নাটক দেখাটাই হতে পারে তার প্রকৃত মূল্যায়ন। এখন সময় হয়েছে সেলিম আল দীন কেন লিখতেন, কী নিয়ে লিখতেন এটা ভেবে দেখার।

আজকের হুমায়ুন ফরীদি হয়ে উঠতে পারতাম না : হুমায়ুন ফরীদি

সেলিম আল দীনের নাটক সম্পর্কে, সত্যি বলতে কী-- মূল্যায়ন করার যোগ্যতা আমার নেই। তাঁর নাটকের বিষয়ে বা তাঁর নাটক সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিরা, বোদ্ধা ব্যক্তিরাই ভালো বলতে পারবেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা যদি বলি, তবে বলব সেলিম আল দীন ছিলেন আমার পথপ্রদর্শক, টিচার। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আজকের যে আমি, আজকের যে হুমায়ুন ফরীদি, এক্ষেত্রে সেলিম আল দীনের অবদানই সবচেয়ে বেশি। সেলিম আল দীন না থাকলে আমি হয়তো আজকের হুমায়ুন ফরীদি হয়ে উঠতে পারতাম না।

তাঁর সংস্পর্শ পাওয়ায় আমি গর্বিত : শহীদুজ্জামান সেলিম

সেলিম আল দীনের মতো মনীষীর সংস্পর্শ পাওয়ায় আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। তার তৈরি করা কিছু চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি, সেটা আমার জন্য বড় সৌভাগ্যের বিষয়। যুগে যুগে তার মতো উঁচু মাপের মানুষ খুব বেশি আসে না। রবীন্দ্রনাথের পর যদি বাংলা নাট্যসাহিত্যে কারও নাম উল্লেখ করতে হয়, তাহলে সেলিম আল দীনের নামটি উঠে আসবে। আমি তাঁর ছাত্র ছিলাম, তার কাছে অনেক শিখেছি। তিনি আমাদের অনেক দিয়ে গেছেন, আরো অনেক দিতে পারতেন। বড় অসময়ে চলে গেছেন তিনি। তবে সেলিম আল দীন বেঁচে থাকবেন তার নাটকের মাঝে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩২৫, আগস্ট ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।