প্রায় ৯ মাস বিরতির পর ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন শুটিংয়ে ফিরলেন। মাধুর ভান্দারকারের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছবি ‘হিরোইন’-এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি।
অ্যাশের শেষ মুক্তি পাওয়া ছবি হচ্ছে ‘গুজারিশ’। এ ছবিটিতে ঐশ্বর্যকে দেখা গেছে ঋত্বিক রৌশনের বিপরীতে অভিনয় করতে।
ইউটিভি প্রযোজিত ‘হিরোইন’ ছবিটির ঘোষণা হয়েছিল সদ্য সমাপ্ত কান চলচ্চিত্র উৎসবে। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে, ৪৫ দিনের মধ্যে ছবিটির শুটিং শুরু করা হবে। কথা রেখেছেন পরিচালক মাধুর ভান্দারকার, গত ৮ জুন থেকে তিনি শুরু করেছেন ছবির শুটিং। ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনায় রয়েছেন সেলিম সোলায়মান।
‘হিরোইন’ ছবিটির শুটিং শুরুর আগেই ছবিটি নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী মারলিন মনেরো এবং এলিজাবেথ টেইলরের জীবন কাহিনীতে প্রভাবিত হয়ে পরিচালক ‘হিরোইন’ ছবিটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন বলে শোনা যায়। যদিও এটি ভান্দারকার স্বীকার করেন নি। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে শুধু অনুমান করে এসব কথা বলছে। এ ছবিটির গল্পে আসলে হলিউড ও বলিউডের সমসাময়িক পরিস্থিতি উপস্থাপন করা হয়েছে’।
মাধুর ভান্দারকার অবশ্য মেনে নিয়েছেন যে, ‘হিরোইন’-এর প্রধান চরিত্রটি তিনি ঐশ্বরিয়াকে চিন্তা করেই তৈরি করেছেন। অ্যাশের তারকা হয়ে উঠা ও সফলতার সঙ্গে ছবিটির গল্পের বেশ মিল আছে।
ঐশ্বর্যের তারকা হয়ে উঠার গল্প তো প্রায় সবারই জানা। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা সুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই জন্ম নেন ভারতের ম্যাঙ্গালুরে ১৯৭৩ সালের ০১ নভেম্বর। তার বাবা কৃষ্ণারাজ রাই ছিলেন একজন জীবতত্ত্ববীদ, মা বৃন্দা রাই পুরোপুরি একজন গৃহিনী। এরকমই একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়ে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন ঐশ্বরিয়া।
মুম্বাইয়ের ডিজি রূপারেল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ঐশ্বর্য স্বপ্ন দেখেন আর্কিটেক্ট হওয়ার। রাহিজা টেকনোলজিক্যাল কলেজে আর্কিটেকচারে ভর্তিও হয়ে ছিলেন। এ সময়ই মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করায় লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়।
অ্যাশ যখন ক্ল্যাশ নাইনের ছাত্রী নিতান্ত শখের বশে তখন মডেলিংয়ে আসেন। ক্যামেলিন ইন্ড্রাষ্টির মডেল হন। আর্কিটেকচারে পড়ালেখা শুরু পর্যন্ত শখের মডেলিংটা চালিয়ে যান।
ঐশ্বর্য ১৯৯৪ সালে অংশ নেন মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায়। এতে সুস্মিতা সেন খেতাব জয় করলেও দ্বিতীয় স্থানে থেকে ঐশ্বরিয়া পান ‘মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড’ খেতাব। এবছরই অ্যাশ মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ ও ‘মিস ফটোজনিক’-এর মুকুট জিতে নেন। একই সঙ্গে পাল্টে যায় ঐশ্বর্যের জীবন।
১৯৯৪ সালে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিতে বলিউডের নজর কাড়েন ঐশ্বরিয়া৷ এরপর অনেকটা সাদামাটা ভাবেই বলিউডে আগমন৷ কিন্তু দিন দিন নিজের জায়গাকে পোক্ত করেছেন এই সুন্দরী৷ এখনও কান চলচ্চিত্রের মত জায়গাতে ইভা লংগোরিয়া কিংবা কেট উইন্সলেটের মত ঐশ্বরিয়ার উপস্থিতিও দর্শকদের মনে সাড়া জাগায়৷ বিশ্বের নামকরা সব কোম্পানির বিজ্ঞাপনে এখনও এই সুন্দরীর চাহিদা আগের মতই৷
প্রায় ৪০টির বেশি ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাই অভিনয় করেছেন। শুধু হিন্দি নয়; অভিনয় করেছেন ইংরেজি, তামিল ও বাংলা ছবিতে। বলিউড ছাড়িয়ে অ্যাশ নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন হলিউডে। বর্তমানে বিশ্বের জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
ঐশ্বর্য অভিনীত সফল ছবির মধ্যে আছে আউর পেয়ার হোগায়া, হাম দিল দে চুকে সোনম, কুছ না কহো, হামার দিল আপকা পাস হায়, দিল কি রিস্তা, দেবদাস, মহব্বাতিন, চোখের বালি (বাংলা), রেইন কোট, ব্রাইড এন্ড প্রেজুডিস (ইংরেজি), বান্টি ওর বাবলি, উমরাওজান, মিস্টিস অব স্পাইস (ইংরেজি), যোদা আকবর, প্রভোকড (ইংরেজি), রাবন প্রভৃতি।
সালমান খান ও বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে অ্যাশের গভীর হৃদ্যতার গুঞ্জন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত অভিষেক বচ্চনের সঙ্গেই ঘর বেঁধেছেন। ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় বলিউডে সবচেয়ে আলোচিত এই বিয়ে। অ্যাশ এখন বচ্চন পরিবারের গৃহবধূ, অভিষেকের স্ত্রী এবং অমিতাভ ও জয়া বচ্চনের পুত্রবধূ। অভিষেকের ব্যাপারেও অ্যাশের আবেগের কমতি নেই, বরং একটু বেশিই আছে। তারা একে-অপরকে খুব ভালোবাসেন। তাদের সম্পর্কটাও অন্য সেলিব্রেটিদের মতো ঠুনকো নয়।
ব্যক্তি জীবনে ঐশ্বরিয়া বেশ সাদাসিধে ধরনের। মুখে রঙ মেখে আলগা রূপ যোগ করার চেষ্টা করতে খুব কমই দেখা যায়। আসলে তার দরকারও পরে না। বলিউডের একমাত্র এই প্রতিষ্ঠিত নীল নয়নার মধুর হাসি এমনিতেই হীরের টুকরার চেয়েও বেশি ঝলমলে। তাই অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সাধারণের চেয়ে বেশি কিছু না করলেও চলে। ঐশ্বর্য এখন থাকেন বচ্চনদের বিশাল বাংলোর নিজস্ব অংশে, সঙ্গে অবশ্যই অভিষেক।
ভুবনমোহিনী রূপ আর স্বভাবজাত গুণ দিয়ে ঐশ্বর্য জিতে নিয়েছেন দেশ-বিদেশের নামি-দামি Ÿহু পুরস্কার। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদে তিনবার আসা প্রথম ভারতীয় সুপারস্টার তিনি। এমনি এমনি তো আর ঐশ্বরিয়ার মোমের ভাষ্কর্য নিউইয়র্কের মাদাম তুসো জাদুঘরে স্থান পায় নি।
ঐশ্বরিয়ার নতুন ছবি ‘হিরোইন’-এ থাকছে তারই জীবন-গল্পের ছায়া। কাজেই ছবিটির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গেছে সবার।
বাংলাদেশ সময় ২০১০, জুন ১৫, ২০১১