সম্প্রতি প্রয়াত পপসম্রাট আজম খানের সন্তানেরা তাদের বাবার গান নিয়ে বাণিজ্য বন্ধের আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একটি প্রেরণ করেছেন। আজম খানের পরিবারের পক্ষে এই বিবৃতি প্রচার করেন কুল এক্সপোজারের কর্ণধার এরশাদুল বারী টিংকু।
আজম খানের সন্তানেরা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী আজম খান আমাদের বাবা। গান ছিল তার প্রাণ। জীবনে তিনি যেসব গান করে গেছেন সেগুলোই তার সবচাইতে বড় সম্পদ। মানুষ তাকে চিনেছে শিল্পী হিসেবে। বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন নিজেকে। অতীব দুঃখের বিষয়, তার মৃত্যুর পর তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তার গান ঘিরে অশ্লীল বাণিজ্যে মেতে ওঠে একদল ব্যক্তি। এদের মধ্যে বিখ্যাত থেকে অখ্যাত সব ধরনের শিল্পী রয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়াতে তারা নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে আজম খানের গান গাইবে বলে। অথচ সেখানে তার গান গাওয়া হচ্ছে বিকৃত সুরে। এটি প্রকারান্তরে শিল্পীর প্রতি অপমান।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় ‘একজন শিল্পীর কাজ বিকৃত করা মানেই ওই শিল্পীকে অপমান করা। প্রথিতযশা একজন শিল্পী কোন ধরনের মূল্যবোধ থেকে এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে তাদের বিকৃত উল্লাস দেখে আমাদের হৃদয় কেঁদে ওঠে। কারণ এসব গান ছিল আমাদের বাবার সবাচাইতে প্রিয় সম্পদ। নিজের জীবনের চাইতে এসব গান ছিল তার অধিক প্রিয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের মৃত্যুর পর টেলিভিশনে তার গান বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক নামীদামী স্পন্সরদের সহায়তায় কনসার্ট আয়োজন করে আর্থিক সুবিধা পেলেও শিল্পীর পরিবারের সাথে অনুমতি কিংবা অন্য কোন প্রেক্ষিতে তারা কোনপ্রকার যোগাযোগ করেনি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে শিল্পীর গান করার অনুমতি রয়েছে একমাত্র তার নিজের হাতে গড়া ব্যান্ড উচ্চারণ-এর। অথচ তাদের সাথেও কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি দায়িত্ববোধহীন এসব ব্যক্তি। ’
এ প্রসঙ্গে শিল্পী আজম খানের বড় মেয়ে ইমা খান বাংলানিউজকে বলেন, বাবা বেঁচে থাকলে এসবের প্রতিবাদ জানাতেন। তার অবর্তমানে আমাদের সবার দায়িত্ব তার সৃষ্টিকে রক্ষা করা। আমি সবার উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাই, এখন থেকে যাতে আর কেউ শিল্পী আজম খানের কোন গান তার পরিবারের বিনা অনুমোদনে কোথাও গাইবেন না। শিল্পীর অপর কন্যা অরণি খান জানান, বাবার প্রিয় এসব গান কোথাও বিকৃত সুরে গাইতে শুনলে আমার কষ্ট হয়। প্রকৃত কোন শিল্পী কখনো এ ধরনের অপচর্চায় লিপ্ত হতে পারে না। শিল্পীর একমাত্র পুত্র হৃদয় খান বলেন, আমার একটাই অনুরোধ শিল্পী হয়ে আরেক শিল্পীর গানের কথা এবং সুর যেন কোন অবস্থাতেই বিকৃত করা না হয়। আমার বাবার গানগুলো তিনি যেমন রেখে গেছেন তেমনি সুরেই যেন রয়ে যায় চিরকাল।
আজম খানের নিজের গড়া ব্যান্ড উচ্চারণের বেজিস্ট জুবরান বলেন, গানের কথা এবং সুর বিকৃত হলেও কেউ কিছু বলছে না। চ্যানেলগুলো যথারীতি ব্যবসা করে যাচ্ছে। আমরা চাই অবিলম্বে এসব অবৈধ চর্চা বন্ধ হোক। এ প্রসঙ্গে মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদুল হক বলেন, আজম খানের গান আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হলে শিল্পীর সৃষ্টিকর্মের ওপর অসাধু চক্রের অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। টেলিভিশিনে কিংবা রেডিওতে আজম খানের নামে মায়াকান্না করে বাণিজ্য করলাম, অথচ শিল্পীর এতিম সন্তানদের বৈধ হক থেকে তাদের বঞ্চিত করলাম, এ ভন্ডামো কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, এটি অতীব দুঃখজনক, তার মৃত্যুর পরপরই একদল ব্যক্তি তার ছবি সম্বলিত টি-শার্ট তৈরি করে বিক্রি, তার সেরা গানের অ্যালবাম প্রকাশ ইত্যাদি বাণিজ্যে নেমে পড়ে। কিন্তু আইন অনুসারে এ ধরনের যে কোন উদ্যোগ নেয়ার পূর্বে শিল্পীর পরিবারের নিকট থেকে যথাযথ অনুমতি নেয়া আবশ্যক। কেননা, শিল্পীর অবর্তমানে এ সবের পূর্ণ মেধাসত্ত্ব বর্তমানে তার পরিবারের। শিল্পী বেঁচে থাকতে আমরা তাকে যথাযোগ্য সম্মান দেখাতে পারিনি। অন্তত মৃত্যুর পর তার আত্মাকে যেন আমরা আর অপমান না করি।
বাংলাদশে সময় ২০১০, জুন ২৫, ২০১১