ভয়কে জয় করা নিয়ে গল্প-গান-কবিতা অনেক কিছুই আমরা জানি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানিনা ভয় ও আতঙ্ক কি এবং তা কত বিচিত্র রকমের হতে পারে।
পেপারোফোবিয়া (কাগজ আতঙ্ক)
গাজায় কত জন মারা গেল? ইউক্রেনে বিমান কীভাবে ধ্বংস হলো ? পত্রিকা পড়ে এসব কিছু জানতে পারবেনা যদি কোনো ব্যক্তির পেপারোফোবিয়া থাকে। সহজ ভাষায় কাগজ নিয়ে যে আতঙ্ক তাই পেপারোফোবিয়া। এই আতঙ্ক নানা রকমের হতে পারে। কেউ ছেঁড়া কাগজ দেখলে আতঙ্কিত হয় , কেউ তা ধরতে ভয় পায়। এইরকম ভেজা কাগজ, সাদা কাগজ, পুরাতন কাগজ ইত্যাদি নানা ধরনের কাগজে নিয়ে আতঙ্ক থাকতে পারে।
কথাগুলো আমার মনগড়া নয়। ট্রান্সফরমার খ্যাত সুপারসেক্সি নায়িকা মেগান ফক্স’র পেপারোফোবিয়া আছে; তারটা অবশ্য শুকনো কাগজের ভয়।
এফিবিফোবিয়া (তারুণ্য আতঙ্ক)
অবাক হওয়ার কিছু নেই। যৌবন একটা লাল টমেটো-বাংলার কোকিল বলে পরিচিত মমতাজের এই গান অনেকেই শুনেছেন। যৌবনের লাল টমেটো অনেকের কাছে ভীতিজনক এবং তা আতঙ্কের সৃষ্টি করতে পারে। আপনি কি পন্ডস বা ওলে’র এজিং প্রটেক্টর ক্রিম ব্যবহার করতে ভয় পান? না, এতে প্রমাণ হয়না যে আপনার এফিবিফোবিয়া আছে।
যদি বুড়িয়ে যাওয়াতেই বেশি আনন্দ আর টিন এজ কাউকে দেখলে আপনার ভয় করে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।
মেট্রোফোবিয়া (কাব্য আতঙ্ক)
এই মেট্রো আমাদের ভবিষ্যতের মেট্রো রেল না। কবিতা নিয়ে যদি আপনার বিরক্তি আতঙ্কে পরিণত হয় তবে তা এক প্রকার হওয়ার মেট্রোফোবিয়া। কাব্যপ্রীতি না হয়ে ভীতি হলে তাকে মেট্রোফোবিয়া বলা হয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক কবি এবং কাবিতা পাঠকদের দেখেছি। কবিতার প্রতি সে এক মহান প্রেম। রাস্তায় গরু পথ আটকে আছে আর বলতে শুনেছি ’এই ধেনু সড়ে দাঁড়া নতুবা তোকে বর্ষার প্রথম কদম ফুল দিয়ে আঘাত করবো’ (একটি কাল্পনিক ঘটনা)
কল্পনা বা বাস্তক যাই হোক কাব্যপ্রেমের কাছাকাছি যারা আছেন তারা সাতপাচ না ভেবেই কাব্য চর্চা করে যান। গান লিখুন, কবিতা-ছড়া যা ইচ্ছা লিখুন কারন আপনি মেট্রোফোবিয়ামুক্ত।
এমিটোফোবিয়া (বমি আতঙ্ক)
নিজের মায়ের হাতের রান্না ছাড়া অন্য কারুর রান্না খেতে আপনার ভয় হয়। হবেই তো কারণ এতে আপনার হজমের সমস্যা হয়, মাথা ঘুরতে থাকে, চোখ ঝপাসা হয়ে আসে আর বমি বমি ভাব শুরু হয়। তাহলে আপনার এমিটোফোবিয়া থাকতে পারে।
সোমনিফোবিয়া (ঘুমের আতঙ্ক)
সকালে ইন্টারভিউ কিংবা এক্সাম তাই রাতে ঘুম হচ্ছেনা? লক্ষণ খারাপ। আপনার সোমনিফোবিয়া আছে তাই ভাল করে ঘুমাতে পারেন না। সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হয়। চেষ্টা করুন চিন্তাগুলোকে দূরে রাখতে। আর এতেও যদি আপানার ঘুম না হয় ফেসবুকে রাত না জেগে ডাক্তার এর কাছে যান।
ক্রোমোফোবিয়া (রং আতঙ্ক)
আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার উজ্জ্বল রং ভাল লাগেনা নাকি আপনি আতঙ্কতি রঙিন কাপড় নিয়ে? এটিও কিন্তু এক ধরনের ফোবিয়া। ফোবিয়া থাকতেই পারে এটা পাপের কিছু না। তবে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়াটাই জরুরি।
ইসোপট্রোফোবিয়া (আয়না আতঙ্ক)
’আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন...পড়বে চোখে’ ছোট বেলায় মনে হতো এটা আবার কেমন গান। আয়নার সামনে দাঁড়ানোর আতঙ্কই ইসোপট্রোফোবিয়া। নিজের রিফ্লেক্সন দেখতে আতঙ্ক হতে পারে ইসোপট্রোফোবিয়া আক্রান্ত মানুষের । এটা নিয়ে অনেক কুসংস্কার আছে। তবে এখন অল্প মানুষেরই এই আতঙ্ক আছে।
আরগোফোবিয়া (কাজ আতঙ্ক)
অনেকেই এই আতঙ্ক কামনা করে। কাজের চাপ বেশি থাকলে আরগোফোবিয়া হতেই পারে। এই ফোবিয়া যাদের আছে তারা অনেক সময় কথা বলতে ভয় পান, অনেকে আবার আতঙ্কে থাকেন কৃত কর্ম নিয়ে, অনেকেই মনে করেন তিনি যা করেন সবই ভুল, অনেকে মনে করেন তিনি ফাকিবাজ, অনেক মানুষ আবার নিজেকে অলস ভাবতে ভালবাসেন, অনেকে বলতে ভালবাসেন ’আমার বাবার অনেক টাকা থাকলে কাজ না করে ঘুরাঘুরি করতাম’। এই রকম নানা ধরনের কর্মভীতি আছে যা আতঙ্কে পরিণত হওয়ার আগেই নিজেকে গুছিয়ে নিন।
ফোবোফোবিয়া (আতঙ্কের আতঙ্ক)
অবাক হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্ক নিয়ে যারা আতঙ্কিত তারা ফোবোফোবিয়ায় ভুগছেন। মানুষ ভয় নিয়েই বাঁচে, ভয়কে জয় করেই বাঁচে। কেউ অফিসের বসের আতঙ্কে আছে, কেউ আছে, কোনো প্রেমিক প্রেমিকার আতঙ্কে ভুগছে আর প্রেমিকা ভুগছে প্রেমিক কখন মোবাইল চেক করে, ফেববুক দেখে এই আতঙ্কে। স্কুলের বাচ্চারা পরীক্ষা আতঙ্কে আক্রান্ত, এই রকম সব ভয় আর আতঙ্ক কোনো মানুষের মধ্যে যদি খুব তীব্র আকার ধারণ করে সে ফোবোফোবিয়ার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে পারে।
ভয় পেয়ে ভীত হয়ে গুটিয়ে না থেকে ভয় থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলাই জীবন। তাই ইতিতে বলছি, ’মুক্ত করো ভয় আপনা মাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়’ ।