শাড়ি প্রথাগতভাবে নারীর পোশাক হিসেবেই পরিচিত। দৃষ্টিনন্দন হাতে বোনা এ পোশাক দেখতে জমকালো, সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতীক ও আপ্রাণ পরিশ্রমের ফসল।
শাড়ি: ঐতিহ্যের সীমানা ছাড়িয়ে বইটি রতা কাপুর চিশতির দীর্ঘ ২৫ বছরের গবেষণার ফসল। নাম থেকেই বোঝা যায় এর বিষয়বস্তু হলো ভারতীয় শাড়ি ও শাড়িসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়।
১৯৮৪ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারতের হাতে বোনা বস্ত্রশিল্পগুলির একটি প্রামাণ্য নথি তৈরি করার। এরপর দীর্ঘ আট বছর ধরে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেন। এ সময় তিনি শাড়ি ব্যবহারকারী নারী ও শাড়ি বোনা কারিগরদের সাক্ষাৎকার নেন আর ছবি তোলেন।
এ সময় তিনি বেশ কটি একাডেমিক বই প্রকাশ করেন। তবে তার ইচ্ছা ছিল সাধারণ পাঠকদের জন্য একটি প্রকাশনা বের করার। তার এ ইচ্ছারই ফসল এই অসাধারণ বইটি। বইটিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পটভূমিতে বিভিন্ন ঘরানার শাড়ির মধ্যকার সূক্ষ্ম সব পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে।
বস্ত্রশিল্পের প্রত্যেকটি ধরনের বিস্তারিত বর্ণনার পাশাপাশি এ বইতে রয়েছে শাড়ি পরার ১০৮টি পদ্ধতির রেখাচিত্র। বিভিন্ন ধরনের শাড়ির প্রতিটা ভাঁজ, পাট, আবরণ ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে ব্যাখা করা হয়েছে এ বইতে। একই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নারীদের শাড়ি পরিধান শৈলীর বিস্তারিত বিবরণ। চিশতির নিজের ভাষায়, ‘শাড়ি পরার ধরন দিয়েই পরিধানকারী তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও চাল-চলন প্রকাশ করে থাকেন। ’ যেমন : দণি ভারতের ব্রাক্ষণ সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু নারীরা ঢিলেঢালা ও লম্বা শাড়ি পরে থাকেন। অন্যদিকে পশ্চিমভারতের কৃষিকাজ করা নারীরা পেঁচানো ও পায়ের উপর ভাঁজ করে শাড়ি পরতে পছন্দ করেন।
চিশতি তার গবেষণা শুরুর পর পার হয়ে গেছে দুই যুগেরও বেশি সময়। এর মধ্যে শাড়ির জগতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সুলভ যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি সিন্থেটিকের শাড়ির কারণে হাতে বোনা শাড়ি প্রস্তুতকারকদের জীবন-জীবিকা আজ হুমকীর সন্মুখীন। অন্যদিকে ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে বহুসংখ্যক নারী এখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। তাদের কাছে শাড়ির চেয়ে পশ্চিমা পোশাকই বেশি পছন্দের।
এ পরিবর্তনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে তার গবেষণা হালনাগাদ করার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেন চিশতি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, নিম্নপ্রযুক্তি ও উচ্চদক্ষতানির্ভর হাতো বোনা শাড়ির বাজার এখনো রয়েছে। শুধু কারিগরদের কারখানায় তৈরি শাড়ির ডিজাইন নকল করা বন্ধ করে হাতে বোনা শাড়ির ব্যাপক বৈচিত্র্য তুলে ধরতে হবে। চিশতি এমন একটি বিপণন ব্যবস্থা কল্পনা করেন যেখানে বিপণন কেন্দ্রে ওস্তাদ কারিগরদের তৈরি ব্যয়বহুল শাড়ি থাকবে ওপরের থাকে একটি অভিজাত অবস্থানে, আর তার নিচে থাকবে তুলনামূলকভাবে নবীন কারিগরদের তৈরি শাড়ি । চিশতি বলেন, ‘আমি গান্ধীবাদী অর্থনীতির কথা বলছি না। এটাই ভবিষ্যৎ। ’
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮২৬, জুলাই ২৬, ২০১০