ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের দৃষ্টি এখন সমুদ্রে: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
বাংলাদেশের দৃষ্টি এখন সমুদ্রে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের দৃষ্টিও এখন সমুদ্র অঞ্চলের দিকে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোস্টগার্ড বাহিনী অধিকতর সক্ষমতা অর্জন করবে বলেও জানান তিনি।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।  

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে কোস্টগার্ডের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোস্টগার্ডের প্যারেড পরিদর্শন এবং সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব এবং সমুদ্র সম্পদের বিপুল সম্ভাবনার বিষয়টি অনুধাবন করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফায় তখনকার পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করাসহ একটি সুসংগঠিত নৌবহরের দাবি জানান।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র এবং সমুদ্রসম্পদের ওপর দেশের জনগণের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে ‘The Territorial Waters and Maritime Zone Act’ প্রণয়ন করেন। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম এ ধরনের আইন পাশ হয়। ৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো দীর্ঘ ২১ বছরে সমুদ্র অঞ্চলে দেশের সার্বভৌমত্বের কথা ভাবেনি। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এ বিষয়ে কাজ শুরু করে।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে আমরা সারা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোস্টগার্ড অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। উপকূলীয় এলাকার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব সমুদ্র এলাকায় সার্বভৌমত্ব এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় কোস্টগার্ড অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। এজন্য আমি প্রথমেই কোস্ট গার্ড- এর সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই।  

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ১৯৯৫ সালে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ২৮ বছরে আজ একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের উত্থাপিত বিলের কারণেই ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড’ একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার কোস্টগার্ডের বিভিন্ন জোনের জন্য ভূমি বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং নতুন নতুন জলযান সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখে।  

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্টগার্ডের স্টেশন ও আউটপোস্টসমূহে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যোগ করেন প্রধানমত্রী।

কোস্টগার্ডের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্রে নিরাপত্তার জন্য এ বাহিনীর আধুনিকায়নে রূপকল্প-২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী আমাদের সরকার জাহাজ, সরঞ্জামাদি ও জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে। কোস্টগার্ডের গভীর সমুদ্রে টহল উপযোগী আরও ৪টি ওপিভি, ৯টি প্রতিস্থাপক জাহাজ, ২টি মেরিটাইম ভার্সন হেলিকপ্টার সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে শিগগিরই এ বাহিনীতে যুক্ত হতে যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, মেরিটাইম সার্ভাইল্যান্স সিস্টেম, হোভারক্র্যাফট ও দ্রুতগতিসম্পন্ন বোট। গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এ সব জাহাজের সংযোজন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ বাহিনী অধিকতর সক্ষমতা অর্জন করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দৃষ্টিও এখন দেশের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে নিবদ্ধ। সমুদ্রপথে আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে এবং সুনীল অর্থনীতির বিশাল ভাণ্ডার মজুত রয়েছে এই বঙ্গোপসাগরে। বাংলাদেশ জলসীমায় সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোস্ট গার্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ বাহিনীর মূলমন্ত্র হলো-  ‘Guardian at Sea’ অর্থাৎ ‘সমুদ্রে অভিভাবকত্ব অর্জন’। যার মর্মার্থ হলো- সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় জনগণের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা যাতে আমাদের দেশে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্য আমাদের সরকার সর্বদা সচেষ্ট। এজন্য আমি আহ্বান করছি, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।  

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রতিটি বেইস, স্টেশন, আউটপোস্টসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বৃক্ষরোপণসহ অন্যান্য শাক-সবজি, ফল-মূল উৎপাদন করা হচ্ছে। আমাদের খাদ্য আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব। সবাই মিলে জাতির পিতার স্বনির্ভর ‘সোনার বাংলাদেশ’ আমরা গড়বই, ইনশাআল্লাহ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে সুখী-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
এসকে/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।