ঢাকা: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত সম্ভাবনা আর সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশ হবে আন্তর্জাতিক এভিয়েশন গেটওয়ে, পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোর যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ক উপস্থাপনা অবলোকনকালে তিনি এ কথা বলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যেকার যোগাযোগের সেতুবন্ধন, এভিয়েশন গেটওয়ে।
রিফুয়েলিংয়ের জন্য কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবহার করলে আন্তর্জাতিক রুটগুলোর দূরত্ব কমবে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার বিমানবন্দর। বিমানের রিফুয়েলিংয়ের জন্য এখন যেমন সবাই দুবাইকে গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করে, সে রকম কক্সবাজার গেটওয়ে হিসেবে পরিণত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক রুটে রিফুয়েলিংয়ের জন্য কক্সবাজার কম দূরত্বের মধ্যে পড়বে, ঘুরে যেতে হবে না। সরাসরি কক্সবাজার থেকে তারা এই সুবিধা নিতে পারবে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো রিফুয়েলিংয়ের জন্য কক্সবাজার এলে দেশের আয় বাড়বে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল বিমানবন্দরে সব কিছু ডিজিটালি পরিচালিত হবে, যাতে অতি দ্রুত ও সহজে মানুষ আন্তর্জাতিক মানের সেবা পেতে পারে। এজন্য বিমানবন্দরের অপারেশন এবং মেইনটেইন্যান্স একটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হবে।
‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের হালনাগাদ তথ্য প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান জানান, আগামী অক্টোবরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে।
এখন পর্যন্ত তৃতীয় টার্মিনালের ৬১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী অক্টোবরে প্রকল্পের মোট কাজের ৯৩ শতাংশ শেষ হবে। ছোটখাট কিছু কাজ বাকি থাকবে।
ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে জানিয়ে সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান বলেন, এই ব্যয় বাড়ার সঙ্গে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং দক্ষতা বাড়বে।
বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি ফ্রান্সের রাডার প্রস্তুতকারী কোম্পানি থ্যালাসের রাডার স্থাপন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাডার স্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। রাডার স্থাপন হলে দেশের আয় বাড়বে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন রাডার স্থাপনের ফলে এভিয়েশন সেক্টরে আয় বাড়বে এবং এ থেকে ভালো রিটার্ন আসবে। কারণ তখন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাওয়া বিমানগুলো ট্র্যাক করা সহজ হবে এবং তাদের কাছ থেকে রিকোয়ার্ড ফি এবং সার্ভিস ফি পাওয়া সহজ হবে।
সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, ২০২১ সালের অক্টোবরে নতুন রাডার স্থাপনের প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এটি শেষ করার সম্ভাব্য সময় হচ্ছে ২৪ সালের জুন মাসে। কিন্তু এটি একই সময় অর্থাৎ তৃতীয় টার্মিনাল এবং রাডার দুটি একই সময় উদ্বোধন করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, ভারত ও মিয়ানমার থেকে পাওয়া সমুদ্রসীমা পর্যন্ত রাডারের ক্যাপাসিটি বিস্তৃত থাকবে। আকাশ যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বেশি আধুনিক ও নিরাপদ হবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এমইউএম/আরএইচ