ঢাকা: প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে 'নিউ ইয়র্ক বাংলা বই মেলা-২০২৩'। আগামী ১৪-১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে ৩২তম এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় 'নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা'র আয়োজক সংস্থা মুক্তধারা ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলার আহ্বায়ক ড. আবদুন নূর জানান, গত ৩১ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে নিয়মিত এ মেলার আয়োজন করে আসছে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন৷ ১৯৯২ সালে বিশ্বজিত সাহার একক প্রয়াসে এ মেলার যাত্রা শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ১৪ থেকে ১৭ জুলাই ৩২তম 'নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা'র আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, লেখক, পাঠক, প্রকাশকরা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও কৃষ্টির আধুনিক চর্চার অঙ্গিকার নিয়ে 'নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা'য় অংশ নেবেন। মেলায় নতুন বই নিয়ে আলোচনা ও সেমিনার হবে। এতে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন হবে।
'নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা'য় অংশ নিতে জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা নথিভুক্ত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা মেলার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
ড. আবদুন নূর আরও জানান, গত বছরের মতো এবারও 'নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা'য় মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে। যার অর্থমান ৩ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া অভিবাসী নতুন লেখকদের প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে 'শহীদ কাদরী গ্রন্থ পুরস্কার-২০২৩' ও মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা থেকে বিজয়ী শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা সংস্থাকে 'চিত্তরঞ্জন সাহা সেরা প্রকাশনা সংস্থা পুরস্কার-২০২৩' দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা প্রকাশক, লেখকরা 'নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা'য় যোগ দিয়ে সেটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের লেখক, কবি, শিল্পী ও পাঠকদের মিলনমেলায় এই বই মেলা ক্রমে ক্রমে বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং কৃষ্টির নিবিড় চর্চকেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। এই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ও বিশ্বের বহুদেশে বাংলা বইমেলা আয়োজিত হচ্ছে। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ভাষা ও স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা। শুধুমাত্র অনুবাদ দিয়ে ভিন্ন ভাষাভাষী কাছে বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরা কঠিন। কারণ অনুবাদ পৃথিবীর কঠিন কাজগুলোর একটি। বাংলা একাডেমি সেই কঠিন কাজটি করার চেষ্টা করছে। সব বই না হোক, অন্তত বিখ্যাত বইগুলোকে অনুবাদ করলে আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলায় যতবার গেছি, বিদেশিরা জিজ্ঞেস করেছে, তোমাদের ইংরেজি ভাষার বই নেই? এই মেলায় অন্তত দুইটি স্টলে থাকা উচিত যেখানে বিদেশি পাঠকদের জন্য বাংলার ভাষার অনুবাদ বই থাকবে। এতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি অনেক দূর পৌঁছাবে।
নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, এই বইমেলা আসলে বই মেলা নয়, এটি একটি সংস্কৃতি মেলা। এই মেলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ও শিশুদের কাছে একুশের মূল চেতনা তুলে ধরতে হবে। আশা করি সবার প্রচেষ্টায় এবারের বইমেলা আরও প্রাণবন্ত ও সফল হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক কবি মিনার মনসুর, কথা সাহিত্যক আনিসুল হক, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, ভারতীয় কবি কাজল চক্রবর্তী, অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী মনিরুল হক, সময় প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী আলমগীর শিকদার, কবি শিহাব শাহরিয়ার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এসসি/জেএইচ/এসএ