টাঙ্গাইল: ১০ বছর আগে মোছা. মাহমুদা খানমের (১৯) ট্রাকচালক বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশ সদস্য বড় বোন মোর্শেদা খানমের সহযোগিতায় চলে নয় সদস্যের পরিবার।
তিনি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের মো. মতিয়ার রহমানের মেয়ে। তিনি সাত বোনের মধ্যে পঞ্চম। শুধু মাহমুদা খানম নয়, তার মতো ঘুষ ও স্বজনপ্রাতি ছাড়া ১২০ টাকার সরকারি ফি পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ১৩৮ জন।
নতুন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগে ক্ষেত্রে ঘুষ ও স্বজনপ্রাতির প্রয়োজন হয়নি। আবেদনকারীরা তাদের যোগ্যতা বলে চাকরি পেয়েছেন। বুধবার (১৫ মার্চ) গভীর রাতে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন গ্রিলশেডে প্রার্থীদের যাচাইবাছাই শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। পরে পুলিশ সুপার সবাইকে নিজ হাতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ও মিষ্টি মুখ করান।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, কনস্টেবল নিয়োগ পাওয়ার জন্য জেলায় ৪ হাজার ৭০৬ জন চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ ৯৩২ জন। লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয় ২০১ জন। মেধার ভিত্তিতে ১৩৮ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে ১৬ জন নারী রয়েছেন। বাকি ১২২ জন হলো পুরুষ। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে, অনেকেই কৃষক, দিনমজুরসহ হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান রয়েছে।
মাহমুদা খানম বলেন, ছোট বেলা থেকে পুলিশ বড় বোনকে দেখে ইচ্ছে ছিলো পুলিশ হওয়ার। কিন্তু অনেক টাকা ঘুষ লাগে। এত টাকা পাবো কোথায় ভেবে মন খারাপ হতো। আমি হয়তো দেশ ও জনগনের স্বার্থে কাজ করতে পারবো না। তবে সরকারি ফি ১২০ টাকায় চাকরি পেয়ে আমি আনন্দে আত্মহারা।
গোপালপুরের হাদিরা গ্রামের আফরোজা আক্তার বলেন, ১৪ মাস আগে আমার বাবা মারা যান। বোন জামাইয়ের সহযোগিতায় আমাদের পরিবার চলতো। একটি চাকরির জন্য ছয় মাস আগে সেনাবাহিনীর মাঠে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রাথমিক মেডিকেলে বাদ পড়ি। পরিবারের হাল ধরতে আমার একটি চাকরির খুব প্রয়োজন ছিলো। বর্তমান সময়ে বিনা পয়সা পুলিশে চাকরি পাবো তা কল্পনাও করিনি। চাকরি পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। আমার বাবা থাকলে আরও বেশি খুশি হতেন। দেশ ও জনগণের সেবা করতে সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই।
দেলদুয়ার উপজেলার নাল্লাপাড়া গ্রামের রুপা আক্তার বলেন, আমার কৃষক বাবা ৫ বছর ধরে অসুস্থ। আমার একটি চাকরিটি খুব দরকার ছিলো। আমি ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছি। আমি গরিব পরিবারের মেয়ে। অনেক কষ্টে লেখাপড়া করেছি। চাকরি পেয়ে আমি অনেক খুশি। আমি কখনই কল্পনাই করতেই পারিনি যে ১২০ টাকায় চাকরি পাবো। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। গোপালপুরের নগদা শিমলা ইউনিয়নের উজ্জল মিয়া বলেন, আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি দুই বছর অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। পুলিশের এ চাকরি আমার খুব দরকার ছিলো। চাকরিতে উর্ত্তীর্ণ হবে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমি দেশের এবং মানুষের সেবা করতে চাই।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করার লক্ষে আইজিপির উদ্যোগে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারা প্রার্থমিকভাবে চাকরিতে উর্ত্তীণ হয়েছে। যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের অনেকেই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রকৃত মেধাবিরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে। এতে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই টাঙ্গাইল পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই। পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ সব সময়ই জনণের স্বার্থে কাজ করে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
জেএইচ