ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিটিটিসি’র সংবাদ সম্মেলন

পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য কেনা হয় ৫০ শতাংশ জমি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য কেনা হয় ৫০ শতাংশ জমি  সিটিটিসি’র সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেপ্তার ১০ জন সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ এবং প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য হিজরতের মাধ্যমে নিজ নিজ গৃহত্যাগ করে পার্বত্য এলাকায় আসে এবং প্রশিক্ষণ শুরু করে।

কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী জামিল কুলাউরা থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ৫০ শতাংশ জমি কিনেছিল।

সেখানেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়।  

রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

গত শনিবার (১২ আগস্ট) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউরা থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন হিলসাইড’ পরিচালনা করে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ৪ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারীসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

অভিযানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র, কমান্ডো রুট, পাঞ্চিং ব্যাগ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সামগ্রী, উন্নবাদী বই, নগদ অর্থ এবং স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কথিত এই ইমাম মাহমুদ, ইমাম মাহাদী'র অগ্রবর্তী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা বিশ্বাস করে বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে ইমাম মাহাদীর পূর্ব যে ‘দুর্বল প্রকৃতির’ ব্যক্তির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে, তাদের নেতা ইমাম মাহমুদ সেই ব্যক্তি। আর এ কথিত ইমাম মাহমুদ ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদে নেতৃত্ব প্রদান করবেন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা জানায়, কথিত ইমাম মাহমুদ তাদের বলেন যারা এ জিহাদে অংশগ্রহণ করবেন তারা সবাই পরকালে পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন। জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের প্রথম ধাপ হলো গৃহ ত্যাগ তথা হিজরত। তাই জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দশে ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার জন্য তারা সবাই ঘটনাস্থলে মিলিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, জামিল নামক কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী কুলাউরা থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ৫০ শতাংশ জমি কিনেছিল। সেখানেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে যশোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকদের পরিবারসহ এবং পরিবার ছাড়া নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তথ্য পেয়ে এ সংক্রান্তে অনুসন্ধান শুরু করে সিটিটিসি'র কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।  

তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানা থেকে ডা. সোহেল তানজীম রানা, যশোর জেলা থেকে ঢাকার নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থী ফাহিম, জামালপুর থেকে এরশাদুজ্জামান শাহিনসহ আরও অনেকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে গত ৭ আগস্ট রাজধানীর দারুসসালাম থানাধীন গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে  হিজরতের মাধ্যমে সপরিবারে গৃহত্যাগ করে আসা ৬ নারী, ৮ পুরুষসহ মোট ১০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি'র কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি টিম। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ৮ শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা মোট ৬টি পরিবার হিজরতের জন্য গৃহত্যাগ করেছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের মধ্যে মেহেরপুর জেলা থেকে হিজরতকারী ৫টি পরিবার এবং ঝিনাইদহ জেলা থেকে হিজরতকারী ১টি পরিবার ছিল।

গত ১২ আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই গ্রুপের আরও এক সদস্য মো. ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি ইউনিট। গ্রেপ্তার ফরহাদ জিজ্ঞাসাবাদে জানায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউরা থানা এলাকায় একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে তার বেশকিছু অনুসারী আস্তানা স্থাপন করেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ‘অপারেশন হিলসাইড’ অভিযান চালিয়ে শিশুসহ ৪ পুরুষ এবং ৬ নারীসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংগঠনের নাম কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইমাম মাহমুদের কাফেলা। ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামেই তারা বিভিন্ন লোকজনদের উদ্বুদ্ধ করেছে। আরো বলা হয়, ইমাম মাহাদী'র আগমনের পূর্বে যে ইমাম মাহমুদ এর কথা বলা হচ্ছে, তিনিই সেই ইমাম মাহমুদ।  

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গিরা কি সক্রিয় হচ্ছে কিনা? তাদের কোনো নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কিন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি তাদের কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, ইমাম মাহমুদ বলে যে নিজেকে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন তিনিসহ এ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। গ্রেপ্তার করা গেলেই সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার পাওয়া যাবে।

আস্তানাটি কতদিন আগে স্থাপন করা হয়েছিল? জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান বলেন, দুমাস আগে রাস্তাটি স্থাপন করা হয়েছিল। আস্তানা তৈরি করার জন্য ৫০ শতক জায়গা কেনা হয়েছিল। যার নামে ওই জমির দলিল করা হয়েছিল সেই দলিল গ্রহীতার নামও আমরা পেয়েছি। তবে কত টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়েছিল সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তাদের সদস্যদের জিহাদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন ছিল সবকিছুই ওখান থেকে পরিচালনা করা হতো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।