ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অর্থায়ন একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বুধবার (৫ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা জানান। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের আন্তর্জাতিক ক্রমে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ১৭৫ দেশের মধ্যে ছিল ১২০তম, প্রতিবছর আমাদের অবস্থানে উন্নতি হচ্ছে এবং ২০২৩ সালে ১৬৬টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান হয়েছে ১০১তম। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সর্বাধিক এসডিজি অগ্রগতি সম্পাদনের জন্য আমাকে ‘সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক’ কর্তৃক ২০২১ সালে ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা শুরু থেকেই সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করি। ফলে বৈশ্বিক অবস্থানে আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক হলেও কোভিড-১৯ এর অভিঘাতের ফলে সারা পৃথিবীর ন্যায় আমাদের এখানেও বাস্তবায়ন কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। আমরা অত্যন্ত দক্ষতা ও দৃঢ়তার সাথে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি, জীবন ও জীবিকা সমুন্নত রেখে আমরা অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিতে পেরেছি। তবে কোভিডের পর পরই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে থাকে। মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব আমাদেরকেও বহন করতে হচ্ছে, যার প্রভাব সার্বিকভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন গতিকেও শ্লথ করছে। আমরা মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সমন্বয় করে এটিকে মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে প্যালাস্টাইনে ইসরাইলের আগ্রাসনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, তাতে আমাদের কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বশান্তির জন্য যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছি। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের—‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ নীতি বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে অবদানকারী দেশ না হলেও অন্যতম ভুক্তভোগী দেশ। নিজস্ব অর্থে আমরা অভিযোজন সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তবে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০) বাস্তবায়নে প্রয়োজন প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আবার ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যাশনাললি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) বাস্তবায়নের জন্য ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলাসহ সার্বিকভাবে সম্পূর্ণ এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অর্থায়ন একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। যেহেতু রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে এসডিজিকে সমন্বিত করে কাজ করছি, তাই আমরা আশাবাদী যে, ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৪
এসকে/এমজেএফ