ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২০ জুন ২০২৪, ১২ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মহাখালী টার্মিনালে বাস সংকট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৪
মহাখালী টার্মিনালে বাস সংকট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ঢাকা: পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতে বাড়ি পথে ছুটছে মানুষ। তবে প্রতিবারই ঘরমুখো মানুষের এ ঈদযাত্রায় সঙ্গী হয় ভোগান্তি।

এবারো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি ঢাকায় ফিরতে না পারায় মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দেখা দিয়েছে বাস সংকট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। উঠছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও। যদিও টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো কাউন্টারেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। যাত্রীরা দালালদের কাছ থেকে টিকেট কেটে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেন দাবি মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির।

শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার যাত্রী বাড়ি ফিরতে টার্মিনালে হাজির হয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত টিকেট। আবার টিকেট মিললেও কখন বাস আসবে এবং টার্মিনাল ছাড়বে তার নিশ্চয়তা নেই।

টার্মিনালের এনা ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারের সামনে দেখা যায় যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। টিকেট পেতে ছোট শিশু, ব্যাগ-বস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। কিন্তু পর্যাপ্ত বাস না থাকায় টিকেট বিক্রি করছে না ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে যাত্রীসেবা দেওয়া এ পরিবহনটির কর্তৃপক্ষ।

এ লাইনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. বাবুল হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি৷ আজ নিজে যাচ্ছি। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও এখনো টিকেট মিলেনি। পা ব্যথা করছে। কিন্তু কিছু করার নেই। পরিবারের সবাই বাড়িতে৷ কষ্ট হলেও যেতে হবে।

হাসনিম তমা নামের আরেক যাত্রী বলেন, দেড় ঘণ্টা দাঁড়ানোর পর টিকেট পেয়েছি। এরপর আরো এক ঘণ্টা কেটে গেছে। বাস নেই। তাই অপেক্ষা করছি।

আবুল হোসেন নামের আরেক যাত্রীকে দেখা যায় বড় দুটি ব্যাগ ও ছোট শিশুদের নিয়ে কাউন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। নারীদের টিকেটের লাইন ছোট হওয়ায় ওনার স্ত্রী টিকেট কাটছেন। আবুল হোসেন বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় প্রতিবারই এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়৷ আমরা এটা মেনে নিয়েই বাসা থেকে বের হই। তবে বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। এ গরমে তারা বেশিক্ষণ দাঁড়াতে চায় না। তবে এসব ভোগান্তি ঈদের আনন্দের কাছে কিছুই না।

এনা ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার আবু সুফিয়ান বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি৷ রাস্তায় ব্যাপক যানজট রয়েছে৷ বাস টার্মিনালে ফিরতে পারছে না। যার কারণে যাত্রীর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ আমরা ১০টি বাসের টিকেট বিক্রি করেছি। যেগুলো এখনো টার্মিনাল ছাড়েনি। তাই টিকেট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে৷ এগুলো টার্মিনাল ছাড়লে বা নতুন বাস টার্মিনালে ঢুকলে আবার টিকিট বিক্রি শুরু হবে।

ঢাকা-বগুড়া রুটে যাত্রীসেবা দেওয়া শাহ ফতেহ আলী বাসের টিকেট কেটেছেন মোহন নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ৪টায় বাসের টিকোট কেটেছি৷ এখন সাড়ে ৫টা বাজে। কিন্তু গাড়ি নেই। বাড়ি যেহেতু যেতে হবে, কিছু করার নেই। তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়নি।

এ বাসের কাউন্টার মাস্টার স্বপন বলেন, বিকেল সোয়া ৩টার বাস ছাড়তে হয়েছে সাড়ে ৫ টায়। ৪টার বাস এখনো টার্মিনালে আসেইনি। কীভাবে বাস ছাড়বো। রাস্তায় যানজটে বাস আসতে পারছে না।

এনা বা শাহ ফতেহ আলী পরিবহন বাড়তি ভাড়া আদায় না করলেও শেরপুর, হালুয়াঘাট শ্যামলী বাংলা, সোনার বাংলা, সৌখিন পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এসব বাসের সামনে অস্থায়ী টেবিল পেতে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে।

মকবুল হোসেন নামের এক যাত্রী বাড়ি যেতে শ্যামলী বাংলা পরিবহনের টিকেট কেটেছেন। তিনি বলেন, ৫০০ টাকার ভাড়া ৮০০ টাকা করে রাখছে৷ কিছু বললে, বলছে অন্য বাসে যেতে। নিরুপায় হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যেত হচ্ছে।

বাড়তি ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন এ পরিবহনে কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা। তারা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাস ফেরার সময় খালি আসে। তাই কিছু টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মো. আবুল কালাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কাউন্টারেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীরা দালালদের মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া দিয়ে টিকেট কাটছেন। কিছু দালাল চুপিসারে এসব টিকেট বিক্রি করেন। এগুলোতে কোনো বাসের নাম, নাম্বার লেখা থাকে না। তারপরও তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানিয়েছেন।

মালিক সমিতির সভাপতির কথার সত্যতা পাওয়া যায় ফের সেসব বাসের সামনে গিয়ে। মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানেই সরে গেছে সেসব টেবিল চেয়ার। তবে টিকেট বিক্রি বন্ধ নেই। বাসের গেটের পাশে চুপিসারে দাঁড়িয়ে বাড়তি দামেই টিকেট বিক্রি করতে দেখা যায় কয়েকজনকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৪
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।