সিরাজগঞ্জ: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই লাপাত্তা সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকারের শতাধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরাও অফিস করছেন না।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত এসব জনপ্রতিনিধি আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে আসা সেবাগ্রহীতারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পরদিন থেকেই সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ, ৯টি উপজেলা পরিষদ ও ৭টি পৌরসভা ৮৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেওয়ার পর দু-একজন এলাকায় ফিরলেও তারা অফিস করছেন না। কেউ কেউ নিজ বাড়ি থেকেই তাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।
গত ৯ মার্চ সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর স্বামী শামীম তালুকদার লাবু। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি ও তার স্ত্রী আত্মগোপনে রয়েছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও। পৌরসভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর এবং ইউপি সদস্যরা ও প্যানেল চেয়ারম্যানরা অফিস করছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অফিস করছেন না। পৌর মেয়র অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও বাড়িতে বসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার লিটন আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে সেখানে চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা হয়েছে। ধামাইনগর ও চান্দাইকোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অফিস করলেও বাকি ৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাপাত্তা।
কাজিপুর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদের সবগুলোর চেয়ারম্যানই আত্মগোপনে। খোঁজ নেই উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী ও পৌর মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদারেরও। ফলে এসব এলাকায় জনসেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে দু-একজন চেয়ারম্যান নিজ বাসায় থেকে অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লাপাড়া পৌর মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম বাসা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও পরিষদে যাচ্ছেন না। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরাও আত্মগোপনে।
একই অবস্থা শাহজাদপুরে। এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এলাকায় থেকে দায়িত্ব পালন করলেও বাকিরা লাপাত্তা। খোঁজ নেই পৌর মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদীর। তবে নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান হালিমুল হক মিরু এলাকায় রয়েছেন, তিনি শিগগিরই অফিস করবেন বলে জানা গেছে।
কামারখন্দ উপজেলার চেয়ারম্যান ও ৪টি ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। তাড়াশের উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র অফিস করলেও ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা অফিস করছেন না।
বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বাড়ি থেকে অফিস করছেন, তবে অনুপস্থিত রয়েছেন নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামসহ ৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন আত্মগোপনে থাকলেও এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা অফিস করছেন বলে জানা গেছে।
সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ওমর ফারুক বলেন, আমরা প্যানেল চেয়ারম্যানকে দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
কাজিপুরের নিশ্চিন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল কবির আত্মগোপনে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, পরিষদের কোনো জরুরি কাজ থাকলে সেটা নিজ বাসাতেই করছি। পরিস্থিতি ভালো হলে নিয়মিত অফিস করব।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ বলেন, প্যানেল মেয়র ও আমরা কাউন্সিলররা নিয়মিত অফিস করছি। দু-একদিনের মধ্যে মেয়র মহোদয়ও অফিস করবেন।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে যে সমস্যা হয়েছিল সেটা দূর করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। ওইসব ইউনিয়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গত ১৬ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্র অনুযায়ী যে সব উপজেলা ও পৌরসভায় জনপ্রতিনিধিরা অফিস করবেন না সেসব উপজেলায় ইউএনও এবং পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা পরিষদেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
আরএ