ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খুনি হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের আ. লীগ প্রটেকশন দিতো: জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৪
খুনি হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের আ. লীগ প্রটেকশন দিতো: জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

ঢাকা: চোর কিংবা খুনি হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ খুব ভালোভাবে প্রটেকশন দিত বলে উল্লেখ করেছেন ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বিচারহীনতার ১২ বছর 'তাজরীনে শ্রমিক হত্যা: আগুন ও প্রাণের গল্প' মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, তাজরীন গার্মেন্টস হত্যাকাণ্ডের বিচার হলো না কেনো? তাজরীন মালিকের পরিচয় কি ছিল? তিনি যুবলীগের নেতা ছিলেন। যুবলীগের পরে তিনি মৎস্যজীবী লীগের নেতা হয়েছিলেন। যুবলীগের নেতা হওয়ার কারণে তিনি গ্রেপ্তারও হচ্ছিলেন না। আওয়ামী লীগের যেটা ভালো দিক ছিল, তাদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত খুনি হোক, চোর হোক তাদেরকে প্রটেকশন করতেন। দলীয় নেতাদের প্রটেকশন দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে তাদের খুব ভালো ছিল। ফলে তাজরীনের মালিক দেলোয়ার দলের সর্ব্বোচ্চ লেভেল থেকেই প্রটেকশন পেয়েছেন।

তাজরীন গার্মেন্টসের মামলা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশুলিয়ায় যখন দুটি মামলা হলো, সেই মামলায় আসামিদের কোনো নাম নেই। নাম না থাকা অবস্থায় মামলা তদন্তের জন্য সিআইডির কাছে গেল।  সে মামলায় যখন দিনের পর দিন শুনানি চলছে, সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেলোয়ারকে আদালতে হাজির করতে। দেলোয়ার আসলে কোনো সময় হাজির হননি।

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটা তারিখ যাওয়ার পর একদিন দেখি দেলোয়ার কোর্টের ভেতরে বসে আছেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলছেন, দেলোয়ারের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি এবং তিনি জানেনও দেলোয়ার কোথায় আছে। তখন আমি কোর্টে দাঁড়িয়ে বললাম, তিনি কোর্টেই বসে আছেন। তখন জজ সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি এখানে বসে আছেন কেন? দেলোয়ার তখন বলের, সিআইডি তাকে বলছে, কি একটা মামলা আছে, যান দেখে আসেন। সিআইডির প্রতি নির্দেশ ছিল তাকে কোর্টে হাজির করার। অর্থাৎ দেখেন ক্ষমতা, অর্থ এবং রাজনৈতিক পরিচয় যদি সঙ্গে থাকে তাহলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণও কত মধুর হয়।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, দেশে শ্রমিকদের অধিকার পাওয়ার একটাই উপায় শ্রমিকদের সংঘটিত হতে হবে। ক্ষমতায় যেই সরকারই থাক না কেনো শ্রমিকের অধিকার আদায়ে তাকে সব সময় রাস্তায় থাকতে হবে। আমাদের দেশের ব্যবস্থায় শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার তার বক্তব্যে বলেন, তাজরীন থেকে আজ পর্যন্ত যেসব পোশাক শ্রমিক আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন, যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে, আমরা তাদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আমরা মনে করি যে আজকের এ প্রকাশনাটিও আমাদের আন্দোলনের একটি হাতিয়ার।

সভায় অনান্য বক্তারা বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বর তাজরীনে আগুনে পুড়িয়ে শ্রমিক হত্যা ও বিচারহীনতার ১২ বছর হতে চলেছে। দীর্ঘ সময় যাওয়ার পরও শাস্তির আওতায় আসেনি দোষীরা, কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি ক্ষতিপূরণের আইনে, শ্রমিকের মর্যাদাপূর্ণ মজুরিও নিশ্চিত হয়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপ্রধান অঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন তাজরীনে নিহত শ্রমিক শাহ আলমের মা সাহারা বেগম, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, লেখক ও কলামিস্ট কল্লোল মোস্তফা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৪
আরকেআর/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।