ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বৈষম্যবিরোধীদের কার্যালয়ে মারামারির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
বৈষম্যবিরোধীদের কার্যালয়ে মারামারির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারামারির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। সংগঠনটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া একদল শিক্ষার্থী বলেছেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রিফাত রশিদের উপস্থিতিতে তাদের ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।

অন্যথায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।  

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, কিছু বিপথগামী লোক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাহী সদস্যদের ওপর চড়াও হয়েছে। তারা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া শিক্ষার্থীরা।

সেখানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) শিক্ষার্থী তানজিব মো. সোহরাব রেজা অভিযোগ করেন, গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু নেতা-কর্মী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। সেই হামলারই বিচার চাইতে মঙ্গলবার দুপুরে সংগঠনের বাংলামোটরের প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা। সেখানে আশিকুজ্জামান হৃদয় নামে একজনের নেতৃত্বে তাদের ওপর আবারও হামলা করা হয়। তাদের এক নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।

তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করা না হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেব।  

এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ও সদস্যরা বাংলামোটর অভিমুখী একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
এদিকে মারামারির ঘটনার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয় যান সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বিক্ষুব্ধরা এসময় তাকে ঘিরে ধরেন।  

বিক্ষুব্ধদের দাবি, ঘটনার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ উপস্থিত ছিলেন। যদিও এ বিষয়ে রিফাত রশীদসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সহ-সমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুপক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে নির্বাহী কমিটি এখন অফিসে মিটিং করছে। মিটিং শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। ’

সংগঠনের দপ্তর সেলে দায়িত্বরত জাহিদ আহসান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, নির্বাহী কমিটির এক সদস্য এ ঘটনায় আহত হয়েছেন।  

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপথগামী কয়েকজন মানুষ এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর শ্লোগান দিতে থাকে। এক সময় তারা জোর-জবরদস্তি করে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়। এতে অফিস রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদিন, আসাদ বিন রনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আগত ব্যক্তিদের দাবি-দাওয়া শুনতে চান। কিন্তু তারা সহযোগিতার বদলে নির্বাহী সদস্যদের ওপর চড়াও হন। নির্বাহী সদস্য নাঈম আবেদিন এতে আহত হন। পরে অন্য নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্তকারীদের কার্যালয় ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সহিংসতার বদলে সৌন্দর্য এবং সম্প্রীতির বিকাশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাথেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, সাংগঠনিক সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। আলোচনার বদলে যারা সহিংসতার পথ বেছে নেবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের বিষয়ে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রদর্শন করবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম। সেহেতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সারা দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষাও বেশি। ’

‘আমরা ছাত্র-জনতার প্রতি দায়বদ্ধ এবং তাদের অনুভূতির বিষয়ে পরিপূর্ণ সজাগ। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের জন্য বদ্ধপরিকর। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সহিংসতার বদলে সংহতি এবং সম্প্রীতি প্রাধান্য পাবে। ’

এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কেউই সংগঠনের নয় জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিরা কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী থাকলেও কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সাংগঠনিক পরিসরে যুক্ত নয়। ’ 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,  ‘ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল এবং ঘটনার সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নির্বাহী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কাজে নিয়োজিত আছে। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
এজেডএস/এফএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।