ঢাকা, বুধবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২, ০৭ মে ২০২৫, ০৯ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে যেসব বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেল

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪৯, মে ৬, ২০২৫
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে যেসব বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেল মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ঢাকা: ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসির ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা, সহজতর ভিসা প্রক্রিয়া এবং ইতালিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কল্যাণসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।

মঙ্গলবার (৬ মে) প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সফর বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ এবং স্বার্থের ভিত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিফলন। উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং জনগণের কল্যাণে পারস্পরিকভাবে লাভজনক অংশীদারিত্ব গঠনে অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।

ঢাকা সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে পিয়ান্তেদোসি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগের প্রতি ইতালির অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইতালিকে বাংলাদেশের মূল্যবান অংশীদার হিসেবে অভিহিত করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিশেষ করে বাজার প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব এবং বস্ত্র, চামড়া, তথ্য প্রযুক্তি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে যৌথ উদ্যোগের ওপর জোর দেন। তিনি উদ্ভাবন, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, অভিবাসন এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ—বিশেষ করে যুব সমাজের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে তারা ইউরোপে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবদান স্বীকার করেন। তারা বৈধ অভিবাসনের পথ বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতালির সরকারকে ইউরোপে বাংলাদেশিদের আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ঢাকায় ইতালি দূতাবাসে ভিসা আবেদনের দীর্ঘসূত্রিতা বিশেষ করে প্রকৃত ওয়ার্ক পারমিটধারীদের ভিসা প্রক্রিয়ায় বিলম্বের বিষয়ে দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ইতালির প্রাদেশিক অভিবাসন অফিস কর্তৃক ওয়ার্ক পারমিট যাচাই দ্রুত করার জন্য উপযুক্ত বিকল্প খুঁজে বের করার অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই দুই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চলমান সহযোগিতা স্বাগত জানান। তারা মানব পাচার, অভিবাসী চোরাচালান, সন্ত্রাসবাদ এবং সাইবার অপরাধসহ আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদারের ওপর সম্মত হন। তারা নিরাপত্তা কাঠামো শক্তিশালী করতে সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্য ও গোয়েন্দা আদান-প্রদান এবং যৌথ প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

উভয় দেশ আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধ প্রতিরোধে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনে সম্মত হয়েছে।

সফরের সময় উভয় পক্ষই ইতালির সরকারপ্রধানের দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে ইতালির অব্যাহত সমর্থনের কথা স্বীকার করা হয়।

উভয় পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করে যে এই সফরের ফলাফল বাংলাদেশ-ইতালি অংশীদারত্বকে আরও জোরদার করবে এবং পারস্পরিক স্বার্থে সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে তুলবে।

টিআর/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।