ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

বকেয়া বেতনসহ ৩০ দিন হিসেবে বেতন পরিশোধের দাবি টিএলআর শ্রমিকদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৩৬, অক্টোবর ২১, ২০২৫
বকেয়া বেতনসহ ৩০ দিন হিসেবে বেতন পরিশোধের দাবি টিএলআর শ্রমিকদের রেলের অস্থায়ী শ্রমিকরা বকেয়া বেতনসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করছেন, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রেলের অস্থায়ী শ্রমিকদের তিন মাসের বকেয়া বেতন ও নীতিমালার ভিত্তিতে ৩০ দিন হিসেবে বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে সব অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ রেল ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান তারা।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে জানানো হয়, আজ আমরা চারটি দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। প্রথম দাবি, আমাদের তিন মাসের বকেয়া বেতন ও সম্প্রতি ২৫-এর নীতিমালার দৈনিক ভিত্তিতে ৩০ দিন হিসেবে বেতন পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসের ১০ তারিখে কোনো রকম বিলম্ব ছাড়া বেতন পরিশোধ করতে হবে।
এছাড়া সব অস্থায়ী শ্রমিকের চাকরি স্থায়ীকরণের প্রথা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরাপদ কর্মস্থল ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তারা বলেন, আমরা অনেক স্মারকলিপি দিয়েছি, তারা শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আমাদের ২২ দিন হিসেবে বেতন দেবে। আমরা মাঠ পর্যায়ে মাসের ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করে আসছি, কোনো রকম ছুটি ছাড়াই। আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করে রেলের চাকা সচল রাখি। অথচ আমাদের তিন মাস ধরে বেতন হচ্ছে না। প্রতি বাজেটে আমাদের সঙ্গে এ রকম করা হয়। আজ আমরা আমাদের দাবি আদায় করেই এখান থেকে যাবো, অন্যথায় আমরা রেলের নিচে মাথা দেবো।

এসময় বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর ঐক্য ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফেরদৌস হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, গত তিন মাস ধরে আমরা বেতন পাই না। আমাদের বেতন দেবে বলে গত কয়েক মাস ধরে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে যাবো না। আমাদের অনতিবিলম্বে বকেয়া বেতন দিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার আমাদের দিয়ে ৩০ দিন কাজ করিয়ে ২২ দিনের বেতন দেবে, এটা কী করে হয়? রাষ্ট্রের সবাই যদি ৩০ দিনের বেতন পেতে পারে, তাহলে আমরা কী দোষ করেছি? আমরা তো ৩০ দিন ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা ডিউটি করি। তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন? আমাদের দাবি, নীতিমালার ভিত্তিতে ৩০ দিন হিসেবে বেতন পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। সব অস্থায়ী শ্রমিকের চাকরি স্থায়ীকরণের প্রথা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ কর্মস্থল ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে রেলের মহাপরিচালকের দপ্তরের প্রতিনিধি এসে বলেছেন, বিকেল ৩টায় আমাদের সঙ্গে বসবেন। সেখানে আমরা আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করবো। তার পরে কী সিদ্ধান্ত হলো- সেটা জানা যাবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০১৮ এর ৩(২) অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট এক হাজার ৫৫১ জনবলের সেবা কেনার জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন পাওয়া যায়, যার মেয়াদ ৩০.০৬.২০২৫ তারিখ পর্যন্ত। পরে বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটের জন্য আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট তিন হাজার ৮০০ জন অনিয়মিত শ্রমিক নিয়োগের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন পাওয়া যায়, যার মেয়াদ ৩০.০৬.২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ছিল। আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে সুষ্ঠুভাবে রেল পরিচালনার স্বার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ প্রয়োজন।

এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (চতুর্থ সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৫০৫ জন গেটকিপার রয়েছেন; যাদের মেয়াদ ৩০.০৬.২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ছিল। নিরাপদ ট্রেন পরিচালনা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে এসব গেটে এক হাজার ৫০৫ জন গেটকিপারকে দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক খাতে নিয়োগ প্রয়োজন। অপরদিকে শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পাঁচ হাজার ৮১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০২৪–২৫ অর্থবছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা সংস্কার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পরে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়োগ কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কারণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়োগ বিধিমালার ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।  

পরে ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটার বিষয়ে দীর্ঘদিন পরে মতামত পাওয়া যায়। সে আলোকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জিসিজি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।