ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাত গ্রেনেড তৈরিতে দক্ষ ছিল জঙ্গি সাদ্দাম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৭
হাত গ্রেনেড তৈরিতে দক্ষ ছিল জঙ্গি সাদ্দাম নিহত জঙ্গি সাদ্দাম

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জঙ্গি সাদ্দাম হোসেন হাত গ্রেনেড তৈরিতে খুবই দক্ষ ছিল। গ্রেনেড তৈরিতে প্রশিক্ষণও দিতেন তিনি। এছাড়া গত বছর রাজধানীসহ সারাদেশে যেসব জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটে তার বেশির ভাগই ছিল সাদ্দামের তৈরি।

শনিবার (০৭ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র। গত বছর ১ জুলাই হলি আর্টিজানে নারকীয় হত্যাজজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা।

এ ঘটনা তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও নব্য জেএমবি নেতাদের গোপন আলাপচারিতা থেকে এসব তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আর্টিজান হামলার অপারেশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জঙ্গি নুরুল ইসলাম মারজানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সাদ্দাম। সাদ্দাম হাত গ্রেনেড তৈরি করতেন এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষণও দিতেন। গাইবান্ধার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হাত গ্রেনেড মজুত রাখার ব্যবসা ছিল তার। এসব হাত গ্রেনেড দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজেই পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতেন তিনি।

সূত্র জানায়, গত বছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ, নারায়ণগঞ্জ, কল্যাণপুর, সাভারের আশুলিয়া ও ‍টাঙ্গাইলে যে হাত গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল তার অধিকাংশই ছিল সাদ্দামের তৈরি।

 জেএমবির অন্যতম মাস্টার মাইন্ড তামিমের কথা উল্লেখ্য করে সূত্রটি জানায়, মাস্টার মাইন্ড তামিমের হাত ধরেই নব্য জেএমবিতে আসেন সাদ্দাম। গত বছর পহেলা ফেব্রুয়ারিতে নব্য জেএমবিতে যোগ দেন তিনি। তার নামে একাধিক মামলা থাকলেও তাকে চিনতেন না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অচেনা মুখ হওয়ায় সুবাদে অনায়াসেই চলাফেরা করতেন সাদ্দাম। তবে, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা শনাক্ত হওয়ার পর সাদ্দামের খোঁজ পায় পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রযুক্তি ব্যবহারেও খুবই দক্ষ ছিল সাদ্দাম। নব্য জেএমবিতে আসার পর সংগঠনের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম দেখভাল করতেন। নব্য জেএমবির সদস্যরা শুধুমাত্র মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতেন। এছাড়া সবই ছিলে স্ব-শরীরে।  

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চর বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম আনন্দ বাজারে সাদ্দামের বাড়ি। গ্রামের দরিদ্র কৃষক তাজুল আলমের সাত সন্তানের পঞ্চম সন্তান তিনি। স্ত্রী ফারজানার বাবার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। শ্বশুর বাড়িতে থাকা অবস্থায় সাদ্দামকে ‘তুলে নিয়ে যায় পুলিশ’।  

এরপর থেকে তারা অনেক চেষ্টা করেও আর সাদ্দামের খোঁজ পায়নি। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তিন মাস পর তার স্ত্রীর প্রথম ছেলে হয়। সন্তান হওয়ার পর থেকে সাদ্দামের স্ত্রী-সন্তানসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কোথায় চলে গেছে তা জানে না তার পরিবার।

বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন সাদ্দাম।  

তার পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, ছোটবেলা থেকেই গ্রামে শান্ত, মার্জিত ও ভদ্র ছেলে বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। দাখিল ও আলিম পাস করার পর লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। প্রথমবর্ষ পরীক্ষা দিলেও দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আর কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি।

২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে গুলি করে হত্যা, ১০ নভেম্বর রাতে কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের চৈতার মোড়ে মাজার শরীফের খাদেম রহমত আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা এবং একই বছরের ৮ নভেম্বর বাহাই সম্প্রদায়ের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ও রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) রুহুল আমীনকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা মামলার অভিযোগপত্র ভুক্ত আসামি সাদ্দাম হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৬
আরএটি/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।