ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকে পড়েছে প্রায় শতাধিক রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক। তবে এ পথে কাঁচা পাটসহ অন্যান্য পণ্যের রফতানি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে এ ধরনের মনগড়া শুল্ককর আরোপে আগ্রহ হারাবে বাংলাদেশি রফতানিকারক জুট মিলগুলো। বেকার হবে হাজার হাজার শ্রমিক। সরকারও বঞ্চিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন থেকে। বিষয়টি দ্রুত সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে নেওয়া উচিত।
আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তারা ব্যবসায়ীদের মুখে জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে।
সোমবার (০৯ জানুয়ারি) বিকেলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাত্র ১৬ ট্রাক পাটজাত পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে। গত সপ্তাহের সোমবার এই সংখ্যা ছিল ৮০। ভারতে রফতানির উদ্দেশে বেনাপোল বন্দরে পাটের তৈরি চট নিয়ে আসা ট্রাকের চালক বাবলু রহমান বলেন, ৬ জানুয়ারি থেকে তিনি ট্রাক নিয়ে আটকে আছেন। এখনো ভারতে ঢুকতে পারেননি। মালিক পক্ষ তাকে বলেছে, শুল্ককর প্রত্যাহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে, অপেক্ষা করো।
জানা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। তেমনি প্রতিদিন বাংলাদেশি প্রায় দেড়শ’ থেকে ২০০ ট্রাক পণ্য রফতানি হচ্ছে ভারতে।
রফতানি পণ্যের মধ্যে ৮০ শতাংশই পাটের তৈরি। এর মধ্যে রয়েছে সুতালি, ব্যাগ ও চটসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। কাঁচা পাট রফতানিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তেমন একটা মুনাফা পায় না। কিন্তু পাট থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে রফতানি করলে একদিকে যেমন লাভ বেশি হয়, তেমনি অন্যদিকে দেশের জুট মিলগুলোতে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। আমদানি খাতে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি রফতানি খাত থেকেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে।
৫ জানুয়ারি ভারত সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পাটজাত পণ্য রফতানি কারক ৪৩টি জুট মিলের ওপর অতিরিক্ত হারে এন্টি ডামপিং শুল্ককর আরোপ করে চিঠি পাঠায়। এসব জুট মিলের মধ্যে ১৮টি নেপালের ও ২৫টি বাংলাদেশি জুট মিল রয়েছে। এর আগে রফতানি পণ্যের দামের ওপর ইউএস ডলারে চার শতাংশ হারে শুল্ককর আদায় করতো ভারত সরকার। কিন্তু বর্তমানে নতুন করে আবার রফতানিকারক জুট মিলগুলোর ধরন অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন পণ্যের ওপর ২০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার হারে এন্টি ডামপিং শুল্ককর বসানো হয়েছে। এরপর থেকে বাংলাদেশ থেকে রফতানিতে ভাটা পড়েছে।
পাটজাত পণ্য রফতানি কারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার ডেমরা এলাকার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের প্রতিনিধি সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী তৌহিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গত সপ্তাহে তাদের প্রতিষ্ঠানের ২৯ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্যের একটি চালান রফতানি করতে শুল্ককর পরিশোধ করতে হয়েছে ৮৫ হাজার রুপি। বর্তমানে ওই একই পরিমাণ পণ্য রফতানিতে এন্টি ডামপিং শুল্ককর দিতে হবে তিন লাখ ৭০ হাজার রুপি। এতে এখন আর কোনোভাবেই নতুন চালান রফতানি করা সম্ভব হবে না। আগে এলসি করা ছিল এমন কিছু পণ্য রফতানি হচ্ছে। দ্রুত বিষয়টি সমাধানে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
বেনাপোল আমদানি, রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ করে ভারত সরকারের এ ধরনের মনগড়া শুল্ককর সংযোজনে আগ্রহ হারাচ্ছে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের জুটমিলগুলো। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।
তাই বিষয়টি এখনি বাংলাদেশ সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রজস্ব কর্মকর্তা (সুপার) আব্দুস ছামাদ বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারাই বিষয়টি দেখছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৭
এজেডএইচ/এসআই