ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পুলিশকন্যার মরদেহ উদ্ধার: হত্যা সন্দেহে চলছে তদন্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৯
পুলিশকন্যার মরদেহ উদ্ধার: হত্যা সন্দেহে চলছে তদন্ত

ঢাকা: বহুতল আবাসিক ভবন থেকে নিচে পড়ে গেলো মেয়েটি। কিন্তু তখন কোনো চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া গেলো না। এমনকি নিচে পড়ার পরও কোনো শব্দ করেনি কিংবা সামান্যতম নড়া-চড়াও করেনি সে। তবে কি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেয়েটিকে খুন করে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে?

এমনই প্রশ্ন পুলিশকণ্যা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মরদেহ উদ্ধারস্থল আশ-পাশের ভবনের বাসিন্দাদের। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এরপর বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে অবশেষে তরুণীর পরিচয় মেলে। জানা যায়, নিহত রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রুম্পা রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকায় থাকতেন।
মানববন্ধন, ছবি: বাংলানিউজশুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ছোট চিকন গলির দু’পাশে সারিবদ্ধ অনেকগুলো বহুতল আবাসিক ভবন। গলির মাথায় নিরাপত্তা গেট ও দারোয়ান রয়েছে। গলির শেষ মাথায় আরেকটি ভবনের পেছনে এ গলিপথ শেষ হয়েছে। একেবারেই শেষ মাথা থেকেই রুম্পার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

৬৪/৪ ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে মেস রয়েছে। সেখানে সাতজন ব্যাচেলর ভাড়া থাকেন। ঘটনার দিন রাতে ওই মেসে সাতজন ছিলেন।

মেসের বাসিন্দা পলাশ দেবনাথ বলেন, বুধবার আনুমানিক রাত ১০ টা ৪২ থেকে ৪৩ মিনিটে ওপর থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ হয়। বস্তা পড়েছে ভেবে আমরা রুম থেকে বেরিয়ে দেখি একটি মেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাসা থেকে বের হই এবং আমাদের চিৎকারে আশ-পাশের অনেকেই ছুটে আসেন।

পরে মেয়েটিকে উপুড় হওয়া থেকে সোজা করা হয়। এর মধ্যেই স্থানীয় এক ডা. বাসিন্দা ছুটে আসেন। তিনি চেক করে প্রথমেই বলেন মারা গেছে। তখন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলের দু’পাশের ভবন, ছবি: বাংলানিউজ তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত মেয়েটি উপর থেকে পড়েছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় পড়ার সময় কোনো চিৎকার শুনিনি। পড়ার পরও কোনো শব্দ করেনি মেয়েটা, এমনকি সামান্যতম নড়াচড়াও করেনি।

এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, পাশের দুই ভবন (৪ তলা ও ৫ তলা) নাকি শেষের ওই ভবন (১০ তলা) থেকে রুম্পা পড়েছে কিংবা তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে? আর ওই তিনটি ভবনের যেকোনো একটিতে পরিচিত কেউ না থাকলে রুম্পা কিভাবে সেখানে প্রবেশ করবেন? অথবা তাকে নিয়ে যাওয়া কেউ নিশ্চই ওই ভবনের সংশ্লিষ্ট?

এসব প্রশ্নের কোনটিরই সদুত্তর দিতে পারেননি পুলিশ। তবে ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে পুলিশ বাদি হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এটিকে হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় নিয়েই প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পরপরই রুম্পা হত্যার আলামত সংগ্রহ করা হয়। সেসব আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তে প্রাথমিকভাবে রুম্পার উপর থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানা গেছে, কিন্তু প্রতিবেদন পাওয়ার আগে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, আশে-পাশের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে ফুটেজে রুম্পা কোনো একটি ভবনে প্রবেশ করেছেন কিংবা তাকে কেউ নিয়ে গেছেন এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। এছাড়া রুম্পার পড়ে যাওয়ার বিষয়টিরও কোনো ফুটেজে ধরা পড়েনি।
ঘটনাস্থলের দু’পাশের ভবন, ছবি: বাংলানিউজ শুক্রবার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন রুম্পার সহপাঠীরা। তারা অভিযোগ করেন, রুম্পাকে ধর্ষণের পর পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে যথাযথ তদন্তের ভিত্তিতে খুনিদের বিচারের দাবিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা। এ দাবিতে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) স্টামফোর্ড বিশ্বিবিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ড. সোহেল মাহমুদ জানান, নিহত তরুণীর হাত, পা, কোমরসহ শরীরের কয়েক জায়গায় ভাঙা ছিল। মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে স্পষ্ট হবে। মৃত্যুর আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি-না তা জানতে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যে স্থান থেকে রুম্পার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার আশপাশের কোনো ভবনে থাকতেন না তিনি। এর ফলে সন্দেহ জোড়ালো হয়, রুম্পা হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে সেটিও তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষ।

রুম্পাকে হত্যার পর এখানে আনা হয়েছে নাকি আনার পর কোনো ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে অথবা উপর থেকে সে স্বেচ্ছায় আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে লাফিয়ে পড়েছে কি-না কোনটিই এখনও নিশ্চিত নয়। আমরা আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। কিন্তু সেসব ফুটেজে এখনও বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

কাউকে আটক না করলেও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে বলার মতো এখনও কিছু পাই নি। হত্যা সন্দেহেই তদন্তের প্রাথমিক কাজ চলছে। আশা করছি, দ্রুতই বিস্তারিত জানা যাবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়টি জানা যাবে। আমাদের সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
পিএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।