খুলনা: ‘মাসখানিক হইলো আলু খাই না। আলুর যা দাম বাড়ছে তাতে ধরাই যায় না।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে খুলনার বড়বাজারে আলু কিনতে আসা ষাটোর্ধ্ব ভ্যানচালক আমজাদ মিয়া এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর। সেই বিক্রমপুরের আলুর কেজি এখন ৫০ টাকা। কেউ দেখার নাই, বলার কেউ নাই। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ঠেকেছে গরিব মানুষের ঘর-সংসার। মাছ-গোস্ত, ডিম দূরে থাক, কমদামি আলু খেয়ে যারা দিন পার করতো তাদের বাজারের ব্যাগ এখন ফাঁকা।
সরকার নির্ধারিত দামকে ক্রেতাসাধারণ সাধুবাদ জানালেও বাজারে এসে চড়া দাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। অনেকে আলু না কিনেই বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
ক্রেতারা বলছেন, অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে এখনও খুচরা বাজারে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত দাম। বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
বড় বাজারের খুচরা আলু বিক্রেতা আজমল বলেন, আগের বেশি দামে আলু কেনায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে আমাদের। আগের বাড়তি দামে আলু কেনা আছে। তা শেষ না হলে নতুন দামে কীভাবে বিক্রি করব? তাই ৫০ টাকা দরেই আলু বিক্রি করছি।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তিন পর্যায়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। কেজি প্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০, পাইকারিতে ২৫ ও হিমাগার থেকে ২৩ টাকা। এই দামে আলু বিক্রি না করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনার বাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের দামের সমান। অথচ সরকার পাইকারি পর্যায়ে আলুর দাম ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়, যা আগের দামের সমান।
খুলনার সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার কদমতলা বাজারের আমান উল্লাহ ট্রেডার্স ও মাহবুবর ট্রেডার্সের পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্য তোয়াক্কা না করে ৪২ টাকা দরে আলু বিক্রি করছেন। যদিও পাইকারি এ বাজারে তুলনামূলক ক্রেতা কম।
আক্ষেপ করে রমজান আলী নামের এক ক্রেতা বলেন, এক কেজি আলুর জায়গায় এক পোয়া নিয়ে চলতে হচ্ছে। বেচাবিক্রির নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। নিম্নবিত্ত ও গরিবের নাভিশ্বাস উঠছে, কিন্তু বাজারের আগুন নেভানোর মতো দমকল পাওয়া যাচ্ছে না।
খুলনার খাসা অর্গানিক পণ্যের স্বত্বাধিকারী ও আমরা তরুণ উদ্যোক্তা গ্রুপের অ্যাডমিন হেলাল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা যে কাউকে পাত্তা দেয় না তার প্রমাণ আলুর দাম না কমানো। গরিবের পুষ্টির আধার আলু দাম বৃদ্ধির কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সিঙ্গাড়া নেই কোনো হোটেলে। মানুষ বাইরে কাজে বের হয়ে ৫ টাকা দিয়ে একটা সিঙ্গড়া আর পানি খেয়ে শরীর চাঙ্গা রাখে। কিন্তু সেটা এখন অসম্ভব।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে খুলনায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করায় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ কেসিসি পাইকারি কাঁচা বাজার, কেসিসি সন্ধ্যা বাজার ও নিউমার্কেট বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এ জরিমানা করা হয়। অভিযানগুলো পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান, দেবাশীষ বসাক এবং শারমিন জাহান লুনা।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের কাজ সরকার করে। বিক্রেতারা তাদের কাজ করেন। তাদের অজুহাতও থাকে। খুচরা বিক্রেতারা পাইকারির দোষ দেন। পাইকারি বিক্রেতারা বেশি দামে কেনার অজুহাত দেখান। সরকার আলুর দর বেঁধে দেওয়ার পরও বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলে বেশি দামেই আলু কিনতে নাজেহাল হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রশাসন নামমাত্র লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না।
খুলনা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তালুকদার বলেন, আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তিন পর্যায়ে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দামে আলু বিক্রি না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২০
এমআরএম/এমজেএফ