ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যায় ৩২ শিশু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২০
প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যায় ৩২ শিশু ফাইল ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যাদের বয়স ১-৪ বছর। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৩২টি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে।

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের আর্থিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, সিআইপিআরবি এবং আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশের ৭টি উপজেলায় (রায়গঞ্জ, মনোহরদি, শেরপুর, মতলব উওর, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর ও দাউদকান্দি) এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন সিআইপিআরবির উপ-প্রধান পরিচালক আমিনুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১২ সাল থেকে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে এক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে দেখা গেছে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব যদি তাদের দিনের প্রথমভাগে শিশুযত্ন কেন্দ্রে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।

বাংলাদেশে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিনার্গোস এবং সিআইপিআরবি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সিআইপিআরবির উপ-প্রধান পরিচালক আমিনুর রহমান গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরে জানান, মাঠ পর্যায়ের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত কর্মসূচিভিত্তিক একটি গবেষণায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে প্রমাণিত কার্যকর পন্থাগুলো খুঁজে বের করতে চেষ্টা করা হয়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, সারাবিশ্বে ইনজুরিজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু। প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান, এর ৯৭ শতাংশই ঘটে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। আর এই মৃত্যুর ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পাঁচ বছরে কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, যাদের বয়স ১-৪ বছর, যা দিনে ৩২ জনের মতো। সারা বিশ্বে ইনজুরিজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া, এই স্বাস্থ্য সমস্যাটি এখনও পর্যন্ত উপেক্ষিত।

শিশুমৃত্যুর এই ব্যাপকতার মূল কারণ হলো শিশুর পরিচর্যাকারীর সার্বক্ষণিক নজরদারির অভাব, বাড়ির আশেপাশে অরক্ষিত গর্ত, পুকুর, ডোবা ও অন্যান্য জলাধারের আধিক্য, সঠিক শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব এবং দারিদ্র্য।

বাংলাদেশে পরিচালিত এর আগের এক পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশুরা ডে-কেয়ার সেন্টার (আঁচল) কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে তাদের পানিতে ডোবার সম্ভাবনা ৮২ শতাংশ কম।

গবেষণার অংশ হিসাবে ৫৫ হাজার ৭৯০টি প্লে পেন এবং ৩ হাজার ২০৫টি ‘আঁচল’ (শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র) ৭টি উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়। গবেষণায় দুই বছর ধরে প্রায় ১২ লাখ জনগোষ্ঠীকে দুর্ঘটনাজনিত আঘাত বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যার মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩ জন ১-৪ বছর বয়সী শিশুও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এই গবেষণায় ৭০ হাজার শিশুকে প্লে পেন, ‘আঁচল’ বা উভয় কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। এই আঁচলগুলো সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পরিচালিত হয়ে আসছে।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের আর্থিক সহায়তায় সিআইপিআরবি এবং আইসিডিডিআরবি এই আঁচল কার্যএম ২০১২ সাল থেকে পরিচালনা করে আসছে। সিনার্গোস বর্তমানে শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে সমথয়ের মাধ্যমে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে স্থায়ী শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বৃহৎ পরিসরে আঁচল কার্যক্রম পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে অত্যন্ত কার্যকরী। এই গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে যে আঁচল এবং প্লে পেন উভয়ই ১২-৪৭ মাস বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র-আঁচল ২ বছর এবং তদূর্ধ্ব শিশুদের সুরক্ষায় সবচেয়ে সফল হিসেবে প্রমাণিত। যে সময়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই সময় শিশুরা আঁচলে সার্বক্ষণিক শিশু পরিচর্যাকারীর নজরদারিতে থাকায় তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

গ্রামভিত্তিক এই শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সফলভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকরী, যা বাংলাদেশের মতো অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার দূরীকরণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। এই গবেষণায় প্লে পেনের ব্যবহার হয়তো এককভাবে শিশুমৃত্যু রোধে ততোটা কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়নি, তারপরও প্লে পেন বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। এছাড়া বয়সভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রভাব পর্যালোচনার বিষয়ে আরাও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সরকার, দাতা সংস্থা, শিশুদের উন্নয়নে কর্মরত সকল সংস্থা এবং সুশীলসমাজকে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে এর সামগ্রিক প্রসারে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিনার্গোসের ওবায়দুল ফাত্তাহ তানভীর, এশা হোসাইন ছাড়াও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল গাফ্ফার এম, বাছানী অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২০
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।