যশোর: হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ উৎসবের।
বৃহস্পতিবার ষষ্ঠীর দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঘারপাড়া-কালীগঞ্জ মহাসড়কের জহুরপুর বাজারের প্রবেশমুখে বামে গ্রামের সড়কের শুরুতেই বিশাল এক তোরণ। সামনে প্রায় ৩০০ ফিট পর্যন্ত সড়ক মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। এর পরেই জহুরপুর সার্বজনীন মন্দির প্রাঙ্গণে সুসজ্জিত দুর্গাপূজার মণ্ডপ। সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এ মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রবেশমুখে রাখা হয়েছে সাবান-পানি। নারী-পুরুষের জন্য যাতায়াতে আলাদা ব্যবস্থা। সামাজিক দূরত্ব ঠিক রাখতে মণ্ডপের ভেতরে তিন ফুট দূরত্বে অনেকগুলো সাদা রংয়ের বৃত্ত রয়েছে। এর মধ্যেই ভক্ত ও দর্শনার্থীরা দাঁড়াবেন। এখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ, গ্রাম পুলিশ, আনসার সদস্যসহ রয়েছে নিজস্ব সেচ্ছাসেবক। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভক্ত ও দর্শনার্থী মণ্ডপের ভেতরে থাকতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সবার মুখে মাস্ক রাখতে হবে বলে জানান আয়োজক কমিটি।
দুর্গাপূজা বন্ধের সেই ইতিহাস জানতে কথা হয় গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে। ৮০ বছর বয়সী হাজারী বিশ্বাস, মন্দিরের পূজারিণী কল্পনা বিশ্বাস, ৭৫ বছর বয়সী অনাথ সরকার জানান, তারা কখনো গ্রামে দুর্গাপূজা দেখেননি। কিন্তু বংশ পরম্পরায় শুনেছেন প্রায় ২০০ বছর আগে গ্রামে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। ঠিক সে সময়ই গ্রামজুড়ে কলেরা (ডায়রিয়া) মহামারি আসে। এতে অনেক লোক মারা যায়। সে বছর থেকেই এখানকার দুর্গাপূজার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়।
তারা আরও জানান, পূর্ব পুরুষদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল মা দুর্গা কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছিল। যে কারণে ওই মহামারিটি আসে। সেই বিশ্বাস মতে তারা এর আগে কখনো পূজার আয়োজন করেনি।
জহুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওই গ্রামের সন্তান তাপস কুমার ও পল্লী চিকিৎসক উত্তম বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আজ থেকে ৩০ বছর আগে একবার দুর্গাপূজা উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তা পণ্ড হয়ে যায়।
দুর্গোৎসব আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে গণিতে মাস্টার্স শেষ করেছি। করোনার কারণে এ বছর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় লম্বা ছুটি পেয়েছি। তাই পূজার আগে গ্রামে এসে সমবয়সী ও ছোটদের নিয়ে এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি।
কমিটির সভাপতি সরকারি চাকরিজীবী সীমান্ত সরকার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ২০০ বছর যাবত গ্রামের লোক কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। মা দুর্গার আগমন কখনো অশুভ হয় না। তার প্রমাণ এ বছর গ্রামে আয়োজিত দুর্গোৎসব। এবার মায়ের আগমণে সব অন্ধকার ও দুঃখ-কষ্ট ঘুচে যাবে। করোনারূপী অসুর বিনাশ হবে।
জানতে চাইলে জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ দীলু পাটোয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নে ছয়টি স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে জহুরপুর সার্বজনীন মন্দির প্রাঙ্গণের পূজা অন্যতম। কয়েক যুগের ধর্মীয় এক কুসংস্কারকে ভেঙে সেখানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় তা সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আমি আয়োজক কমিটিকে সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা দিয়েছি ও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবশে আমার ইউনিয়নে দুর্গোৎসব শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া আফরোজ বাংলানিউজকে বলেন, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর দুর্গোৎসব একটু ভিন্নভাবে পালিত হবে।
‘শান্তিপূর্ণভাবে এ উৎসব শেষ করতে ইতোমধ্যে তিন স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আশা করছি, সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুষ্ঠুভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২০
ইউজি/আরবি/