পাবনা: পাবনা সদরের পৌর এলাকার থানা পাড়া মহল্লায় চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছিল ইউনিওয়ার্ল্ড হেলথ সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বুধবার (২১ অক্টোবর) রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চেয়ারম্যান এম এ আকবরকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় এক বছর ধরে চার তলার তিনটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে সবার সামনে এমন প্রতারণার ফাঁদ খুলে বসেন শহরের নয়না মতি এলাকার ভুয়া চিকিৎসক আকবর হোসেন ও তার সহযোগীরা। বিবি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাশ করে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে উনানী ও অ্যালোপ্যাথিক পদ্ধতির চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন তিনি। আর এই কাজটি করতে রোগী ও ওষুধ বিক্রির জন্য আকর্ষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে জামানত নিয়ে প্রায় অর্ধশত নারী পুরুষকে নিয়োগ দেয় ইউনিওয়ার্ল্ড হেলথ সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানটি।
এক বছরে প্রায় পাঁচ শতাধিক চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জামানত বাবদ ৫ থেকে ৬ হাজার করে টাকা নিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।
চাকরির জামানতের টাকা আর দীর্ঘ তিন-চার মাস বেতন পায়নি এমন কিছু নারী পুরুষ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আকবার আলীকে আটক করে। এ সময় প্রতিষ্ঠানের ফাইল, মেশিন ও কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
ইউনিওয়ার্ল্ড হেলথ সার্ভিসের স্বাস্থ্যকর্মী ফারজানা লাবণী জানান, মেশিনে হাত রাখা মাত্রই কম্পিউটার মনিটরে উঠে আসছে মানবদেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ শরীরের ৪২ প্রকারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও শারীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অবস্থা। তাৎক্ষণিক দেওয়া রিপোর্টে চিকিৎসাপত্র ধরিয়ে দিয়ে প্রতিটি রোগীকে দেওয়া হতো ছয় থেকে সাত হাজার টাকার ওষুধ। আর এই ওষুধেই সুস্থ হবে রোগী এমটাই বলে দিতেন ভুয়া চিকিৎসক।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা ইউনিওয়ার্ল্ড হেলথ সার্ভিসের অফিসে অভিযান চালাই। সে সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক এম এ আকবর স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া কিংবা পরীক্ষার কোন অনুমোদন পত্র দেখাতে পারেনি। তিনি মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাশ করে কীভাবে নামের আগে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তারও সদুত্তর দিতে পারেনি। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া ও প্রতারক চক্রের কাজ বলে মনে হয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনায় সদর থানার এস আই জহরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও স্বাস্থ্যকর্মী জাকির হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় এম এ আকবরকে আদালত ওইদিনই কারাগারে পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
জেআইএম