ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যবসার জন্য মাত্র ৩০ হাজার টাকা চান দুই চোখ হারানো নুর ইসলাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
ব্যবসার জন্য মাত্র ৩০ হাজার টাকা চান দুই চোখ হারানো নুর ইসলাম নুর ইসলাম শেখ

খুলনা: খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে আমাদের। টাকার অভাবে নিজের ও স্ত্রীর ওষুধও জোটে না ঠিকমতো।

এর পরে রয়েছে তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ। হাঁস-মুরগি পালন, মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ ও ভিক্ষা করে আর কতো চলে।

এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চোখ হারানো নুর ইসলাম শেখ। ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ বিকেলে খুলনার নিরালা প্রত্যাশা আবাসিক এলাকায় বেলুন বিক্রির সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুই চোখ হারান তিনি।

৪৮ বছর বয়সী নুর ইসলাম যশোর জেলার ঝিকরগাছা গ্রামের সোহরাব শেখের ছেলে। ৮০-এর দশকে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসে বাগেরহাট শহরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সংসার চালাতে দিনমজুরসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন তিনি। এরমধ্যে ২০০২ সালে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর গ্রামের আব্দুল মালেক শেখের মেয়ে রিনাকে বিয়ে করেন তিনি। রিনা ও নুর ইসলাম দম্পতির কোলজুড়ে একে একে তিন মেয়ের জন্ম হয়। কিন্তু মফস্বল শহর বাগেরহাটে রিকশা চালিয়ে নিজেদের খাওয়া ও মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারছিলেন না তিনি। ২০১০ সালে খুলনা শহরে পাড়ি জমান। সেখানে রিকশা চালানো শুরু করেন তিনি। তিন মেয়ে নিয়ে খেয়ে-পড়ে ভালোই চলছিল নুর ইসলামের। এরমধ্যে পরিচয় হয় গ্যাস বেলুন ব্যবসায়ী বাহাদুরের সঙ্গে। সিটি করপোরেশন থেকে পাওয়া বাহাদুরের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে খুলনা আদালতের সামনে চায়ের দোকান দেন। নিজস্ব পুঁজি না থাকায় বাকিতে চা-চিনি কিনতে হতো। কিন্তু বিক্রি ভালো না হওয়ায় অনেক সময়ই পাওনাদারের টাকার জন্য দোকান বন্ধ রাখতে হতো। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সহকারী হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার ও বেলুন নিয়ে বাহাদুরের সঙ্গে যেতেন নুর ইসলাম। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা এলো। একই বছরের ২৫ মার্চ বিকেলে খুলনার নিরালা প্রত্যাশা আবাসিক এলাকায় বেলুন বিক্রির সময় বাহাদুরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাহাদুর মারা যান। নুর ইসলামের শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে যায় এবং দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

নূর ইসলাম বলেন, প্রতিদিন তিন বেলা খেতে পারি না। চোখের ড্রপ শেষ হয়ে গেলে ড্রপ কিনতে মাঝে মধ্যে দেরি হয়। স্ত্রীর তিনবার অপারেশন হয়েছে। তারও ওষুধ লাগে। বাজারে গিয়ে ভিক্ষা করি। আমার স্ত্রী মাঝে মধ্যে মানুষের বাড়িতে কাজ করে। গ্রামে কী আর বেশি কাজ পাওয়া যায়। এতে নিজেদের খাবারই চলে না। তারপর রয়েছে মেয়েদের লেখাপড়া। এ অবস্থায় সড়কের পাশে ছোট একটি চায়ের দোকান দিতে চাই। এজন্য ৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন। আমি দোকানে বসবো আর স্ত্রী বেচাকেনা করবে। প্রধানমন্ত্রী, শিল্পপতি ও দানবীরদের কাছে সহযোগিতা চাই।

স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, ৫০০ টাকা ধার করে রাত ১২টার সময় স্বামীকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২৮ দিন চিকিৎসা শেষে খরচ চালাতে না পেরে বাড়িতে নিয়ে আসি। কিন্তু আমার স্বামীর তখন দু’চোখ অন্ধ। খুলনা এসে মানুষের বাড়িতে কাজ করে, ভিক্ষা করে, চেয়ে চিন্তে স্বামীর চিকিৎসা, ওষুধ ও মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়েছি। এক পর্যায়ে খুলনা ছেড়ে বাবার বাড়ি মোড়েলগঞ্জের মোহনপুর গ্রামে এসে একটি কুঁড়েঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করি। আমার বড় মেয়ে সাথী এখন একাদশ শ্রেণিতে, মেজ মেয়ে সুমাইয়া সপ্তম ও ছোট মেয়ে আয়শা আক্তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারে আমরা দু’জনই রোগী। দু’জনের মাসে প্রায় দুই হাজার টাকার ওষুধ লাগে। কেউ যদি একটা সেলাই মেশিনও দিতো তাহলে কাজ করে খেতে পারতাম।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: রিনা বেগম, ব্যাংক এশিয়া, খুলনা শাখা, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর- ১০৮৩৪০১০৭২৩১০। এছাড়া বিকাশে সাহায্য পাঠাতে- ০১৯১৩০৯৮৪৬১।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
এমআরএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।