ঢাকা, শনিবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বুড়িমারীর ঘটনায় আরও ৪ জন গ্রেফতার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২০
বুড়িমারীর ঘটনায় আরও ৪ জন গ্রেফতার

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে গণপিটুনি দিয়ে শহীদুন্নবী জুয়েলকে হত্যা ও মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলায় আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার হলেন ২৯ জন।

রোববার (৮ নভেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আলোচিত জুয়েল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মাহমুদুন্নবী।

শনিবার (৭ নভেম্বর) সকালে আলোচিত এ ঘটনায় করা তিন মামলার প্রধান আসামি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ডেকোরেটরকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা। একই দিনগত রাতে বুড়িমারী পাটগ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও চারজনকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ। এ নিয়ে এ মামলায় ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক।  

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নয়জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শনিবার দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনদিনের রিমান্ড শেষে চারজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় এ পর্যন্ত  মসজিদের খাদেমসহ তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে, গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ডেকোরেটরকে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটে আনা হচ্ছে। তিনি পৌঁছালে হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে পাঠনো হবে। সে ক্ষেত্রে তাকে আদালতে নিতে আরো সময় লাগবে।  

প্রয়োজন হলে হোসেনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে বলেও জানান মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুন্নবী।

কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার অভিযোগে নিহতের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে শনিবার (৩১ অক্টোবর) একটি মামলা অভিযোগের করেন। একই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পাটগ্রাম থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী বাদি হয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের অভিযোগে অপর একটি মামলা অভিযোগের করেন বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত। বহুল আলোচিত তিনটি মামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে  যোবাইয়ের আব্দার নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা।

নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় কোরআর ও হাদিস বই তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।  

সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে  জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী  যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।  

ঘটনাটি তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি এম এ মমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের চাচাত ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা বলে জানায় পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২০
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।