ঢাকা, রবিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ জুন ২০২৪, ১৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

চুরির অপবাদ, কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২২
চুরির অপবাদ, কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন!

ফরিদপুর: ফরিদপুর সদরপুর উপজেলায় ১৪ বছরের এক কিশোরকে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে চার ঘণ্টা বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পরে আহত অবস্থায় ওই শিশুকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেও বাধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরে এ ঘটনায় ওই কিশোরের মা আসমা বেগম (৪২) ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেছেন।

স্থানীয় ও আদালতে মামলা সূত্রে জানা গেছে, সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় গত ১৭ জুলাই (রোববার) রাতে চুরির অভিযোগে রিয়াজ (১৪) নামের এক কিশোরকে আটক করা হয়। পরে তাকে ধরে নতুন বাজার এলাকায় নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে সবার সামনে মারপিট করা হয়। চুরির অভিযোগে রাত ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। এসময় তারা মোবাইলে ওই দৃশ্য ধারণ ও উল্লাস করে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৭ জুলাই সন্ধ্যার পর রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে রিয়াজকে জোর করে তুলে নতুন বাজারে নিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে উপর্যুপরি মারপিট করে। খবর পেয়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে রাত ১২ টার দিকে বাকিতে এই টাকা পরিশোধের অঙ্গীকারের পর সেখান থেকে রিয়াজকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় পরিবার।
 
শিশুটির মা আসমা বেগম জানান, আহত রিয়াজকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও তার চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়। সদরপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার। তবে, মামলা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় উসমান মোল্যাডাঙ্গী গ্রামের আমজাদ মোল্যা (৪০), শাজাহান মোল্যা (৫০), ইউসুফ বেপারী (৬০), কাইয়ুম মোল্যা, নজরুল ইসলাম, মতিয়ার মোল্যা, ইউনুস মোল্যাসহ অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে সাত জনকে আসামি করে গত ২৭ জুলাই ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা করেছেন তিনি (আসমা বেগম)।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তারা টিলাডাঙ্গী গ্রামে জমি কিনে নতুন বসত গড়েন। তার স্বামী ও বড় ছেলে বিদেশে থাকেন। টিলাডাঙ্গীতে জমি কিনে বাড়ি করার পর থেকেই স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী মহল তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। কিন্তু লোকবল না থাকায় তারা প্রতিবাদ করতে পারেন না। শত্রুতামূলকভাবেই তার ছেলেকে এভাবে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন তারা গ্রামে বসবাস করতেই ভয় পাচ্ছেন। তার ছেলেতো ঘরের বাইরেই বের হতে পারছে না।

এ ব্যাপারে ভাষাণচর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কাওসার শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ওই গ্রামে ইদানীং শ্যালো মেশিন চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। পরে ওই রাতে চোর সন্দেহে ছেলেটিকে মারপিট করা হয়। তবে, রাতে ছেলেটিকে আটকের খবর পেয়ে আমি তাদের মারপিট করতে নিষেধ করেছিলাম।


তিনি আরও বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি রিয়াজ নামের ছেলেটা চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তাই পরে তার মাকে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হননি, আদালতে মামলা করেছেন। পরে আদালত মামলাটি সিবিআইকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত গোলদার বাংলানিউজকে বলেন, এমন কোনো ঘটনার খবর কেউ আমাকে জানায়নি। কেউ তার কাছে মামলা করার জন্যও কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এরকম অভিযোগ নিয়ে আসলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ৩০ জুলাই, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।