ঢাকা: মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান ঢুকে কক্সবাজারের টেকনাফে। তারপর সেখানকার ডিলারদের সঙ্গে যোগােযোগ হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ডিলারদের।
শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকের তেলের টাংকির মধ্যে অভিনব পন্থায় আলাদা প্রকোষ্ঠ বানিয়ে ইয়াবা পাচারকালে মাদক পরিবহন চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
গ্রেফতাররা হলেন- আমিনুল ইসলাম (২৬), নুরুল ইসলাম (৪৮), হেদায়েত উল্লাহ (২০)। এ সময় ট্রাকটির তেলের টাংকি থেকে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাজারমূল্যের ১ লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ট্রাকটি জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, ট্রাক মালিক সোহেল গত ৪-৫ বছর ধরে পণ্য পরিবহন ব্যবসার আড়ালে অভিনব পন্থায় ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত। কোড নম্বরের ওপর ভিত্তি করে সোহেলের ৭-৮ জনের এই চক্রটি ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার চালন পৌঁছে দিতেন। জব্দ হওয়া ইয়াবার চালানটি টেকনাফ থেকে গাজীপুরের চৌরাস্তায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল তাদের। ট্রাকচালক নুরুল-হেলপার হেদায়েত ও ইয়াবা চালান পরিবহনের ম্যানেজার আমিনুল গ্রেফতার হলেও পলাতক রয়েছেন চক্রের প্রধান ট্রাক মালিক সোহেল। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে, সোহেল ধরা পড়লে টেকনাফ ও বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার চালান গ্রহণ করা চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
রোববার (৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ট্রাকের মালিক সোহেলের নেতৃত্বে ৪-৫ বছর ধরে চক্রটি পরিবহন ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা পাচার চালিয়ে আসছিল। ট্রাকচালক ও হেলপারকে মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াবা পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করা হতো। ট্রাক মালিক সোহেল ও গ্রেফতার আমিনুল টেকনাফের সিন্ডিকেট থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে। এরপর সোহেলের নির্দেশনায় আমিনুল দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন।
চট্টগ্রামের চকরিয়ায় একটি গ্যারেজে ট্রাকের তেলের টাংকির মধ্যে গোপন প্রকোষ্ঠ তৈরি করা হয়। টেকনাফ গিয়ে টাংকির ভেতরে ইয়াবা রাখার পর সোহেল, আমিনুল ও নুরুল প্রথমে ট্রাক নিয়ে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে আসে। চট্টগ্রামে আসার পর সোহেল ট্রাক থেকে নেমে যান। এরপর আমিনুল, নুরুল ও হেদায়েত চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আমিনুল পেশায় একজন ট্রাকের হেলপার। চট্টগ্রাম ট্রাক স্ট্যান্ডে ট্রাক মালিক সোহেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। অর্থ উপার্জনের প্ররোচনায় তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ট্রাকে হেলপারের বেশে ইয়াবা পাচারের কাজ শুরু করেন। তিনি মূলত দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌঁছে দিতে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন। চালান প্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা পেতেন তিনি। ইতোপূর্বে আমিনুল দুইবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আবারো একই পেশায় যোগ দেন।
গ্রেফতারকৃত নুরুলের সঙ্গে সোহেলের পরিচয় হয় বান্দরবান এলাকায় মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে, পরে তার মাধ্যমে এই চক্রে যোগ দেয়। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবার চালানটি নুরুল ও হেদায়েত পালাক্রমে ট্রাক চালিয়ে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসেন। লাইসেন্স ছাড়াই ১০ বছর ধরে চালক হিসেবে ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন তিনি। মাদকের একটি চালান পৌঁছাতে পারলে তিনি ৫০ হাজার টাকা পেতেন।
গ্রেফতার হেদায়েতেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তিনি হেলপারের কাজ করতে গিয়ে গাড়ি চালানো শিখেন। মাদক পরিবহনের সময় তিনি গাড়ির চালক ও হেলপার উভয় ভূমিকাই পালন করতেন। মাদকের একটি চালান পৌঁছাতে পারলে তিনি ১৫-২০ হাজার টাকা পেতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা বেশকিছু তথ্য পেয়েছি, যেগুলো নিয়ে কাজ করছি। সোহেলকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সোহেল পরিবহন সেক্টরকে পুঁজি করে ছদ্মবেশে মাদক পরিবহন করে আসছিল।
গ্রেফতারদের ভাষ্যমতে সোহেলের একটি ট্রাক, যেটার টাংকিতে করে ইয়াবা বহন করা হতো। আরো ট্রাক রয়েছে কি-না তাকে গ্রেফতার করা গেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২২
পিএম/এএটি