ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

শরীরে পুরাতন ক্ষত-দুর্গন্ধ, তবুও বুকে জড়িয়ে নিল পুলিশ

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
শরীরে পুরাতন ক্ষত-দুর্গন্ধ, তবুও বুকে জড়িয়ে নিল পুলিশ

ঢাকা: শরীরের দুর্গন্ধ উপেক্ষা করে রাস্তায় পড়ে থাকা এক বৃদ্ধকে পরিষ্কার করে ভাত খাওয়ালেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল মোমেন। শুধু তাই নয় অসুস্থ ওই বৃদ্ধের চাহিদা অনুযায়ী পান্তাভাত যোগাড় করে পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে খাওয়ান।

পরে নিজের টাকা দিয়ে নতুন লুঙ্গি পরিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে  চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।   এই মহৎ কাজের সঙ্গী ছিলেন তার সঙ্গে ডিউটিরত দুই আনসার ও এক পুলিশ সদস্য।

শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে শাহবাগ শিশুপার্কের রাস্তায় পড়েছিলেন দানেশ মিয়া ( ৬৫) নামে এক ব্যক্তি। হাঁটতে পারেন না, তার পায়ে ছিল পুরাতন ক্ষত। সেখানে সংক্রমণ হওয়ায় দুর্গন্ধে কাছে যাওয়াই মুশকিল। এ অবস্থায় খবর পায় শাহবাগ থানা। এরপর ওই এলাকায় ডিউটিরত পুলিশ কর্মকর্তা আল মোমেন ফোর্স নিয়ে সেখানে যান। দুর্গন্ধ উপেক্ষা করে শুয়ে থাকা ওই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলেন। তখন দানেশ মিয়া খালি বলতে থাকেন, আমি পান্তা ভাত খাব কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে। তাকে আরও ভালো কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও তিনি কিছুতেই তা খেতে চাননি। শুধু বলেন, পান্তা ভাত খাব। অবশেষে মোমেন পান্তা ভাত যোগাড় করে কাঁচামরিচ পেঁয়াজ দিয়ে তাকে খাওয়ান।

বাংলানিউজ শুরু থেকেই পুলিশের এই কার্যক্রম গোপনে মনিটরিং করছিল। পরে এ বিষয়ে কথা হয় এসআই আল মোমেনের সঙ্গে। তিনি জানান, শিশু পার্কের সামনে যখন তিনি শুয়েছিলেন তার পাশে একটা ভাঙাচোরা হুইল চেয়ার ছিল। পান্তা ভাত খাওয়ানের পরে সেটাসহ তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তার পায়ে পুরাতন ক্ষত জায়গা দিয়ে বেরোচ্ছিল প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। হাসপাতালের সামনে থেকে একটি লুঙ্গি কিনে তাকে সেটা পরিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ভেতরে নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হই।

তিনি আরও জানান, এই বৃদ্ধের বাড়ি নরসিংদী বায়পুরা উপজেলার নুরপুর গ্রামে। তার বাড়িও একই উপজেলায়। তাই ওই বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দানেশ মিয়া শুধু তার নাম এবং গ্রামের বাড়ি বলতে পেরেছেন।

একপর্যায়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওনার বাড়ি কোথায়, আত্মীয়-স্বজন কোথায়- এটা পরে দেখা যাবে। আগে ওনার চিকিৎসা দরকার। তাই চিকিৎসায় মগ্ন থাকি।

দেখা যায় এসআই মোমেন তার ফোর্সসহ দানেশ মিয়াকে পুলিশের গাড়িতে করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এনে খুবই যত্ন করে নিজ হাতে নতুন লুঙ্গি পরান। পরে শরীরের দুর্গন্ধ উপেক্ষা করে তাকে কোলে করে ট্রলিতে উঠান। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা হাসপাতালের ট্রলিম্যানকে অনুরোধ করলে পুলিশের সহযোগিতায় তিনিও হাত বাড়ান।

এদিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা পাশাপাশি অসহায় লোকদেরও পাশে সব সময় থাকে।

এক অচেনা বৃদ্ধের জন্য পুলিশের এই আন্তরিকতা দেখে হাসপাতাল থেকে একজন জানান, ঢাকা শহরে অনেক জায়গা থেকেই মাঝে মাঝে অসহায়দের উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসার জন্য এখানে নিয়ে আসে। সবাই কিন্তু আন্তরিক থাকে না, খালি দায়িত্ব পালন করেন। তবে, ওই বৃদ্ধের প্রতি এই পুলিশ কর্মকর্তার আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো। বুকে জড়িয়ে মমতা দিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা করছেন। কারো হাতে কোনো হ্যান্ড গ্লাভসও ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
এজেডএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।