ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সিত্রাংয়ের প্রভাবে মুষলধারা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
সিত্রাংয়ের প্রভাবে মুষলধারা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী

ঢাকা: ভোর হওয়ার আগ থেকেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব শুরু হয় রাজধানীতে। আলো ফোটার আগেই শুরু হয় বৃষ্টি; ক্ষণে ক্ষণে বাড়ে এর ধারা।

কখনো ঝিরিঝিরি আবার কখনো মুষলধারা। দুপুর গড়াতেই ঢাকায় বৃষ্টির প্রভাব বেড়েছে, এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মব্যস্ত নাগরিকরা।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) হালকা থেকে মাঝারি, আবার কখনও ভারী বৃষ্টিতে বিপদে পড়েছেন স্কুল-কলেজ-অফিসগামীরা। টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, মহাখালী, গুলিস্তান, মতিঝিলের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সায়েন্সল্যাব, পল্টন, মৎস্যভবন এলাকার মতো ব্যস্ততম এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানবাহন অল্প, সংখ্যাও কম যাত্রীদের।

সকাল থেকে অবিরত বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের বিপদ বেশি। জরুরি প্রয়োজনে ঘর বের হওয়া সাধারণ মানুষরাও পারছেন না কাজ সারতে।

পল্টন এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন শারমিন চৌধুরী। জরুরি কাজ থাকায় ছাতা হাতে ঘর থেকে বের হন তিনি। জানান, বাসা থেকে বের হওয়ার পর রিকশা-সিএনজি পাননি। উবার সুবিধাও পাচ্ছেন না। ভাড়া বেশি চায়। পল্টন এলাকার ফুটপাতের অবস্থা বেহাল। ঠিকমতো হাঁটাও যায় না। কাঁদাপানি লেগে বিশ্রী অবস্থা হয়েছে।

সরকারি চাকরিজীবীরাও পড়েছেন বিপাকে। তাজুল ইসলাম নামে সচিবালয়ের একজন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী জানান, ঠিক সময়ে অফিসের জন্য বের হয়েও যেতে পারেননি। যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। রিকশা যে কয়টি পাওয়া গেছিল, সুযোগ পেয়ে তিন-চারগুণ ভাড়া দাবি করেছিল চালকরা। পরে, বাসায় ফিরে গেছেন তিনি।

টানা বৃষ্টির কারণে রিকশাচালকরা আছেন বেশি বিপদে। যাত্রী সংখ্যা কম থাকায় রোজগার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কয়েকজন।

সচিবালয় এলাকার ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের অবস্থাও আজ করুণ। টানা বর্ষণের কারণে কাস্টমার পাচ্ছেন না তারা।

বিভিন্ন বাস চালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে যাত্রী একেবাইরেই কম। সকালেরে দিকে অফিসগামী কিছু যাত্রী পেয়েছিলেন। যেভাবে বৃষ্টি চলছে অফিস ছুটির আগে তেমন যাত্রী পাচ্ছেন না। অনেকটাই অলস বসে আছেন তারা। সিট না পূরণ হলে দৈনিক আয় আসবে না।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী তিনদিনে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশের তাপমাত্রাই কমে এসেছে। ফলে বৃষ্টির মধ্যে হিমেল হাওয়ায় ভোগান্তিতেও পড়ছেন দেশবাসী।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন- ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। এটি মঙ্গলবার সকালের দিকে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল নাগাদ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। এতে সারাদেশের দিনের তামপাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। ঢাকায় এ সময় পূর্ব অথবা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার, যা ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়েছে। আবহাওয়াবিদের তথ্য অনুযায়ী, আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় এটি আঘাত হানবে। আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করবে।

সিত্রাং বাংলাদেশেই আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। সব থেকে বেশি আঘাত হানবে বরগুনা এবং পটুয়াখালীতে বলেও জানান এনামুর রহমান।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের ১০৯টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে পানি সমতল বেড়েছে ২১টিতে, কমেছে ৮৬টিতে, অপরিবর্তিত আছে ২টি পয়েন্টে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, ২৪ অক্টোবর, ২০২২
এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।