ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

নেতিবাচক চিন্তাও সাফল্যের নিয়ামক!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
নেতিবাচক চিন্তাও সাফল্যের নিয়ামক!

সফল হতে চান? শুধুই আশাবাদ ও ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আপনার পথকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এর সঙ্গে নেতিবাচক চিন্তা বা সন্দেহ এবং বাস্তবতাবোধ যোগ হলে সাফল্য এনে দেয়।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ইতিবাচকের বিপরীত শব্দ নেতিবাচক নয়, এটি বাস্তবসম্মত হওয়ার অনুভূতি। আশাবাদ মানুষকে ঝুঁকির অবমূল্যায়নে প্রলুব্ধ করে। আপনি যখন সবকিছু আশাব্যঞ্জক দেখতে পান, আপনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। শুধু ইতিবাচক ও সুখী হলেই ভাগ্যবান হওয়া ও কাজ করা যায় না’।

নতুন একটি গবেষণাও বলছে, ‘ইতিবাচক চিন্তার সীমাবদ্ধতা আছে। এমনকি এর নিজেরও বিপদ আছে। ইতিবাচকতা আপনার সাফল্যকে সীমিত করতে পারে’।

কোপেনহেগেন ভিত্তিক কোম্পানি মিয়ারস্কের স্ট্যাওসলম বলেন, ‘ইতিবাচক চিন্তা সব উদ্যোক্তাদের ডিএনএ’র মধ্যেই কিছু কিছু আছে। আপনি ইতিবাচক না হলে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। কিন্তু এই ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে নেতিবাচক চিন্তা বা সন্দেহ সাফল্য এনে দেয়’।

স্ট্যাওসলম কয়েক বছর আগে টেকসই পেন্সিল কোম্পানির ব্যবসা শুরু করেন তার আগের ব্যবসার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে। তিনি কাগজে সব চুক্তি এবং খারাপ অবস্থার দৃশ্যকল্প অঙ্কন করে সেসব পরিস্থিতি মোকাবেলার পরিকল্পনা আগে তৈরি করেন। এখন ৬০টি দেশে তার কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে। এমনকি স্ট্যাওসলম নিজেও বিস্মিত হয়েছেন এটা দেখে যে, প্রতি মাসে সাড়ে চার লাখ পেন্সিল বেশি বিক্রি হচ্ছে।

‘একজন ব্যবসার মালিকের অনেক ইতিবাচক কথা থাকে। কিন্তু ইতিবাচকের বিপরীত নেতিবাচক নয়। এটি আপনাকে যেসব অর্জন ও কাজ সম্পাদন করতে হবে, সেগুলো সম্পর্কে বাস্তবসম্মত ধারণা দেয়’- বলেন স্ট্যাওসলম।

ইতিবাচক চিন্তা বিষয়ক লেখক নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল ওয়েটিনজেন লিখেছেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, মানুষ তাদের ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে সম্পূর্ণ শক্তিকে কাজে লাগাতে পারেন না। প্রায়ই মানুষ যখন তাদের লক্ষ্য অর্জন সম্পর্কে দিবাস্বপ্ন দেখেন, তারা আসলে তাদের অর্জনের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম বা চেষ্টা করেন না।
এ দিবাস্বপ্ন তাদেরকে সব অর্জন সম্পন্ন হয়েছে-এ কল্পনায় অলস ও আয়েশি করে দেয়। পরিণামে তারা কাজের পেছনের প্রেরণা হারিয়ে ফেলেন’।

লন্ডন ভিত্তিক গ্রুপ দ্য ক্যারিয়ারের পরিচালক মনোবিজ্ঞানী নিমিতা শাহ বলেছেন, ‘মানুষ প্রায়ই তাদের ইচ্ছাকে প্রকাশ না করতে পেরে হতাশাগ্রস্ত হন। তারপর তারা নেতিবাচক চিন্তাকে এজন্য  দায়ী করে বসেন। তারা তাদের নৈরাশ্যবাদী চিন্তাকে সমস্যার অংশ বলে মনে করেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন’।

‘এটি দ্রুত তাৎক্ষণিক খাদ্য গ্রহণের মতোই। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দিবাস্বপ্ন একটি স্বল্পমেয়াদী উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি মানুষকে খারাপ লাগার অনুভূতি দেয়’।

‘সুতরাং, আমাদের চিন্তিত হতে হবে যে, সামনের সময় খারাপ বা কঠিন হতে পারে। আশাবাদ মানুষের মনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়’- বলেন  টালি শ্যারট।

আবেগ কিভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে গবেষণা করেছেন একটি লন্ডন ভিত্তিক মস্তিষ্ক ল্যাবের পরিচালক লেখক শ্যারট। তিনি দেখতে পান যে, মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে একটি ইতিবাচক চিন্তায় পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু আশাবাদের প্রতি মানুষের একটি সহজাত প্রবণতা আছে। তারা কল্পনা করেন, ভবিষ্যৎ অতীতের চেয়ে ভালো হতে পারে।

‘আশাবাদী মন ও ইতিবাচক চিন্তা দীর্ঘজীবী ও আরো স্বাস্থ্যসম্মত করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অত্যধিক আশাবাদ বিপজ্জনক এবং আপনার সাফল্যের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু যদি আমাদের চিন্তাধারায় হাসি-খুশি হতে হয়, নেতিবাচক মনোভাব তাতে সাহায্য করতে পারে। স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জন করতে মানুষকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তার মিশ্রণ ঘটাতে হবে’- বলেন শ্যারট।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
এএসআর

 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।