জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্ত জন্মদিন থেকে শুরু করে প্রথম ধাপ, প্রথম শব্দ, প্রথম খাবার খাওয়া, স্কুলে যাওয়াসহ প্রথম কয়েক বছরের কিছুই আমরা অনেকেই মনে করতে পারি না।
অল্প কয়েকজন মানুষ তাদের দুই বছর বয়সের ঘটনাগুলো মনে করতে পারেন।
এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বড় রহস্য, কেন আমরা আমাদের শৈশব মনে করতে পারি না।
অনুসন্ধানে শনাক্ত করা এ মানসিক শূন্যতা কিছু প্রশ্ন তৈরি করে। আমাদের মনে না করতে পারা শৈশবে আসলে কী ঘটেছিলো অথবা স্মৃতিশক্তি কি পরবর্তীকালে গঠিত হয়? আমরা শব্দবাহী বর্ণনা ছাড়া ঘটনা মনে করতে পারি না কেন? আর কখনও কি আমাদের এসব অনুপস্থিত স্মৃতি ফিরে আসা সম্ভব?
![](http://www.banglanews24.com/media/imgAll/2016October/bg/ASR-inner20161023023442.jpg)
আমাদের জীবনের রেকর্ডে এ শূন্যতাকে শত বছর আগেই ‘শিশু স্মৃতিভ্রংশ’ বলে চিহ্নিত করেছেন মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড।
শিশু জীবনের স্মৃতি গঠনের এ বিস্ময়কর ব্যর্থতা নিয়ে গবেষণায় মনোবিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, নতুন তথ্য সন্নিবেশ করতে শিশুর মস্তিষ্ক প্রতি সেকেন্ডে ৭শ নতুন নিউরাল সংযোগপ্রাপ্ত হয়। এগুলো তার ভাষা শেখার দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করে। আর নতুন নতুন তথ্য পুরনো তথ্য শুষে নেয়।
এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদেরও মস্তিস্ক থেকে তথ্য হারিয়ে যায়, যা ধরে রাখার প্রয়াস থাকে না। তাই এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘শিশু স্মৃতিভ্রংশ’ কেবলমাত্র একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ফলে হয়, যা আমাদেরকে সারা জীবনই অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দেয়।
তাই সর্বশেষ গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়েছে, শিশুদের আগে থেকেই এমনকি গর্ভে থাকাকালেও মানসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করা যেতে পারে।
উনিশ শতকের জার্মান মনোবিজ্ঞানী হারমান এবিংঘাস মানুষের স্মৃতিশক্তির সীমা পরীক্ষা নিজের ওপরই করেছিলেন। তিনি দেখান, আমাদের শূন্য মস্তিস্ক বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বিষয় দিয়ে পূর্ণ হয় এবং এক ঘণ্টা থেকে ৩০ দিনের মধ্যে মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ স্মৃতি ধরে রাখতে পারি, বাকিটা ভুলে যাই।
এবিংঘাস গভীরভাবে অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, যেভাবে আমরা ভুলে যাই, তা সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। শিশুর স্মৃতিশক্তি একটি ভিন্ন বিষয়, যা গড়ে দুই বছর থেকে পরিবর্তিত হতে পারে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী কিউআই ওয়াং এটি ছয় মাস পরেই শুরু হয় বলে মনে করেন।
এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী রবিন ফিভুস বলেছেন, আমাদের সংস্কৃতিও আমাদের স্মৃতিশক্তির প্রভাবক। ভাষাও স্মৃতির কাঠামো গঠনে সাহায্য করে। অভিজ্ঞতা আরও সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন সময়ের ঘটনাকে মনে রাখাকে সহজ করে। যেসব বধির শিশু সাংকেতিক ভাষা ছাড়াই বড় হয়, তাদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে কোনো পার্থক্য নেই।
সেন্ট জোনস বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফ্রি ফাগেনের মতে, স্মৃতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ সব মানুষের জীবনের প্রথম কয়েক বছর নতুন নতুন নিউরন যোগ করায়, শিশুরা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি গঠন করতে অক্ষম। কারণ, তাদের হিপ্পোক্যাম্পাস খুব অনুন্নত হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার আরভিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী এলিজাবেথ লফটাসের মতে, আমাদের শৈশবকালের ঘটনার জায়গায় মিথ্যা স্মৃতি ভরে যেতে থাকে। ফলে আমরা আমাদের শৈশবকেই ভুলে যাই।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
এএসআর/এসএনএস