ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

বিরল গুইসাপ ইগুয়ানার দ্বীপ

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
বিরল গুইসাপ ইগুয়ানার দ্বীপ

ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ বিখ্যাত সামুদ্রিক গুইসাপ ইগুয়ানা আর তাদের গোত্রের মানচিং ক্যাকটাসে আবৃত স্থলজ ইগুয়ানার জন্য। কিন্তু একটির সঙ্গে অন্যটির আবাসস্থল বিচ্ছিন্ন।

চার্লস ডারউইন তার বিখ্যাত বিবর্তনবাদের তত্ত্ব তৈরিতে এখানকার প্রাণীদের নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

বিরল প্রজাতির গুইসাপ ইগুয়ানার দু’টি শ্রেণী বসবাস করে গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে। তাদের মধ্যে একটি স্থলজ ইগুয়ানা ও অন্যটি জলজ ইগুয়ানা। বিবর্তনের ধারায় সাড়ে চার মিলিয়ন বছর আগে এই দুই শ্রেণী পৃথক হয়েছে।

গুইসাপগুলোর ৭৫ শতাংশই সমুদ্রে, বাকি ২৫ শতাংশ ভূমিতে বসবাস করে।

গালাপাগোসের প্লাজা সুর নামক একটি ক্ষুদ্র বসতিহীন দ্বীপে দুই ডজনেরও কম জীবিত বিরল সামুদ্রিক ইগুয়ানার দেখা মেলে। বড় আকারের সামুদ্রিক ইগুয়ানাদের বেশিরভাগই কালো, কিছু দ্বীপে লাল বা নীল রঙেরও দেখা গেছে। ঘাস ও শেওলা খেয়ে বাঁচে এসব প্রাণী।

অন্যদিকে হলুদ রঙের স্থলজ ইগুয়ানার জীবনধারা শুষ্ক প্রকৃতির। তাদের পয়েন্টার মুখভঙ্গি ও ধারালো দাঁত সূঁচের মতো ক্যাকটাস ফুটো করে খেতে সহায়তা করে।

গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে দেখা গেছে, সামুদ্রিক ও স্থলজের কিছু হাইব্রিড ও শংকর ইগুয়ানাও। ২০১৩ সালে চার্লস ডারউইন ফাউন্ডেশনের অ্যালিজন লাইয়েরেনা গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের প্লাজা সুর দ্বীপের পিউয়েত্র আইরা অংশে গণনা করে মাত্র চারটি হাইব্রিড ইগুয়ানা খুঁজে পান। কখনো কখনো একটি শংকর ইগুয়ানাকে দেখেছিলেন।

নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হাওয়ার্ড স্নেলই প্রথম ব্যক্তি যিনি শংকর ইগুয়ানা দেখেছিলেন। ১৯৭৭ সালে স্ত্রী হেইডিকে নিয়ে প্রথমবারের মতো গালাপাগোসে এসেছিলেন তিনি। মার্কিন পিস কর্পস নামক স্থলজ গুইসাপ সংরক্ষণ প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক এই দম্পতিই প্রথম গবেষণা করে ইগুয়ানার সামুদ্রিক ও স্থলজ- এ দু’টি শ্রেণীকে আলাদা করেন।

সামুদ্রিক ইগুয়ানার মতোই হাইব্রিডেরও বেশিরভাগ কালো। তবে, তাদের দীর্ঘ ঘাড় ও ধড় হলুদ ফিতে দিয়ে সুশোভিত, যা তাদের স্থলজ ঐতিহ্যের প্রমাণ।

গালাপাগোস বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে বোঝাতেও সহায়তা করে। কেননা, স্থলজ ইগুয়ানা তাদের সমুদ্রগামী পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে দীর্ঘ থাবা পেয়েছে। স্থলজ ইগুয়ানার দেহটি ক্যাকটাসের কাঁটা দিয়ে আবৃত।

অন্যদিকে সামুদ্রিক ইগুয়ানা তার ফ্ল্যাট লেজকে সাঁতার কাটার সময় রাডার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। হাইব্রিড ইগুয়ানারও লেজ একই ধরনের, যদিও তারা কখনো সমুদ্র দেখেনি। অর্ধেক স্থলজ ও অর্ধেক সামুদ্রিক গুইসাপ এরা।

ইতালির রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল বলেন, প্লাজা সুরের শংকর ইগুয়ানা প্রজননক্ষম নয়। তবে ইগুয়ানারা শুধুমাত্র প্রতি বছরের একটি স্বল্প সময়ের জন্য বংশবৃদ্ধি করে। প্লাজা সুরের আক্রমণাত্মক পুরুষ সামুদ্রিক ইগুয়ানা প্রজনন মৌসুমে নারী স্থলজ ইগুয়ানাদের মিলিত হতে বাধ্য করে। আবার নারী সামুদ্রিক ইগুয়ানা মিলনের জন্য প্রস্তুত হলে পুরুষ স্থলজ ইগুয়ানা তাদের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।

দুই প্রজাতি প্রজনন শুরু করলে শেষ পর্যন্ত তারা এক প্রজাতিতে পরিণত হয় এবং তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়। এ ঘটনাকে প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন ইগুয়ানা বিলুপ্তির সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
জেডএস/এএসআর
 
    

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।