ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অফবিট

বিবর্তনেই মানুষের গর্ভকাল সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
বিবর্তনেই মানুষের গর্ভকাল সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে! বিবর্তনেই মানুষের গর্ভকাল সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে!

আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের গর্ভধারণের সময়কাল আমাদের পূর্বপুরুষ স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ। সাধারণত ৩৮-৪০ সপ্তাহ গর্ভে রেখে সন্তান জন্ম দেন একজন গর্ভবতী নারী।

আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের গর্ভধারণের সময়কাল আমাদের পূর্বপুরুষ স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ। সাধারণত ৩৮-৪০ সপ্তাহ গর্ভে রেখে সন্তান জন্ম দেন একজন গর্ভবতী নারী।

যেখানে একটি শিম্পাঞ্জি গর্ভাবস্থার ৩২ সপ্তাহ এবং গরিলা ও  ওরাংওটাংরা প্রায় ৩৭ সপ্তাহ পর প্রসব করে।

রোড আইল্যান্ডের কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলি ডানস্‌ওয়ার্থ ও তার সহকর্মীরা গবেষণা শেষে ২০১২ সালে জানান, গর্ভধারণের সময়সীমা মস্তিষ্কের আকারের ওপর নির্ভরশীল। বিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে মানুষের ঘিলুর সঙ্গে সঙ্গে নবজাতক শিশুদের আকৃতি বড় হয়েছে। আমাদের নারীরা অন্য স্তন্যপায়ীদের চেয়ে গড় শরীরের ভর বেশি দিয়ে সন্তান জন্ম দেন।

নারীদের শ্রোণীচক্র ও জন্মনালীর আকার-আকৃতিও অসাধারণ পরিবর্তনশীল। বিশেষ করে দুই পায়ে ঋজু হাঁটার অভ্যাস তৈরির কারণে এগুলো সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে মানুষের জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াও দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক এবং মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিবর্তনেই মানুষের গর্ভকাল সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে!তবে এ পরিবর্তনগুলো খুব বেশি দিন আগের বা বিবর্তনের আদি পর্যায় থেকে ঘটেনি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তন হচ্ছে মানুষের। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানব সন্তান প্রসব প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সহজ থাকলেও ১০ হাজার বছর আগে ওই দু’টি কারণে হঠাৎ কঠিন হয়ে ওঠে।  

হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস্‌ থেকে স্যাপিয়েন্সরা বিবর্তিত হয়েছে হোমো ইরেক্টাস হয়ে। সে হিসেবে হোমো ইরেক্টাস আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ। এদিকে মানব প্রজাতি হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস বা নিয়ানডারথালরা আমাদের অনেক আগে পৃথিবীতে এলেও সমসাময়িক ছিল। কারণ, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ-এশিয়ায় অভিবাসনের পর থেকে একসঙ্গে বসবাস ছিল স্যাপিয়েন্সদের।

নৃ-তত্ত্ববিদ শেরউড ওয়াসবার্নের মতে, হোমো ইরেক্টাস ও নিয়ানডারথালদের সঙ্গে মিলন-মিশ্রণের পর স্যাপিয়েন্সদের গর্ভধারণকাল বেড়েছে ও বড় শিশু জন্মদানের কারণে প্রসব হয়ে উঠেছে কুখ্যাত বেদনাদায়ক।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউনিভার্সিটি কলেজের শৈশব পুষ্টি চর্চা বিশেষজ্ঞ জোনাথন ওয়েলস বলেন, বিবর্তনের আদি পর্যায়ে আমাদের পূর্বপুরুষদের অনুন্নত মস্তিষ্ক ও অপেক্ষাকৃত ছোট ছিল। মানব গর্ভাবস্থার দৈর্ঘ্যও তখন সংক্ষেপিত ছিল, মানব শিশু অনেক আগেই জগতে আসতো। দুই মিলিয়ন বছর আগে মানুষের মস্তিষ্কের আকার বাড়তে শুরু করে। এরও অনেক কাল পরে বাড়তে থাকে গর্ভকাল। অতএব, বিবর্তনে মানুষ যে বড় মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি পেয়েছে, নারীর শারিরীক যন্ত্রণা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে তার প্রতিদান দিয়েছে। বিবর্তনেই মানুষের গর্ভকাল সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে!অন্যদিকে অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের এখনও ছোট মস্তিষ্ক রয়েছে। আর পরিণামে তাদের গর্ভধারণ সংক্ষিপ্ত এবং শিশুদের প্রসব প্রক্রিয়া উন্নত।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণ হরিণ টরোট্রাগাস শিশুর মতো অন্য কিছু প্রাণীও জন্মের পর পরই সোজা হয়ে পদব্রজে ভ্রমণ করতে পারে। তাদেরও মানুষের মতোই শ্রোণীচক্র ও জন্মনালী রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ গর্ভধারণ করে। বিবর্তন এখানে তাদেরকে ভিন্নপথে নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।