ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

নিজে নিজেই বিবর্তিত!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
নিজে নিজেই বিবর্তিত! মানুষের মস্তিষ্কের খুলি

প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তনে‌ই শুধু নয়, প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা নিজেরাও তাদের শারীরিক আকার-আকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারতো। অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া একটি প্রাচীন প্রজাতির মানুষের মাথার খুলির জীবাশ্মে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তনে‌ই শুধু নয়, প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা নিজেরাও তাদের শারীরিক আকার-আকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারতো। অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া একটি প্রাচীন প্রজাতির মানুষের মাথার খুলির জীবাশ্মে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গবেষকরা জানান, খুলিটি ছিল খনিজ আবৃত ও অদ্ভুত আকৃতির, যা আমাদের পরিচিত মানব প্রজাতিগুলোর সঙ্গে মেলে না।  

স্বাতন্ত্র্যসূচক নিচু ও ঢালু কপাল এবং সমতল বিশিষ্ট ললাট ঢালের কারণে এদের শারীরস্থান একটি ডিগ্রিতে বাঁক নেয়। এ খুলির আরও কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল। তার কপাল ও ললাট সেতুবন্ধ যেখানে থাকার কথা সেখানে ছিল না, যা স্বতন্ত্র আদিম বৈশিষ্ট্যসূচক।

সেজন্য আমাদের নিকটতম কোনো এক পূর্বপুরুষের সদস্য হবে তারা- এটা ধরে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা।

১৯২৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার চহুনা শহরের কাছাকাছি একটি ফসলের মাঠ খুঁড়ে প্রথম খুলিটি আবিষ্কৃত হয় বলে গবেষকরা এর নামকরণ করেছেন চহুনা খুলি। ১৯৪৮ সালে চহুনা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে নাকুরিতে খননকালে প্রায় অভিন্ন দ্বিতীয় খুলি পাওয়া যায়। এরও ৩০ কিলোমিটার দূরে কুবল ক্রিকে ৬৫টি একই ধরনের খুলি পাওয়া যায় শিগগিরই, যেগুলোর অধিকাংশই বিকৃত ছিল। ১৯৬০ সালে আরো কয়েকটি উদ্ভট খুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল কেওডব্লিউ সোয়াম্প নামক কাছাকাছি আরেকটি সাইট থেকে।

মানুষের মস্তিষ্কের খুলি

এসব খুলি নিয়ে গবেষণা শেষে বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের খুলির পরিবর্তন নিজেরাই করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ওই প্রাচীন বাসিন্দারাই বিশ্বের মধ্যে প্রথম ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নিজস্ব খুলির আকৃতি রূপান্তরিত করতে পেরেছিল। কিছু মানুষ আজও তা করে থাকে বলেও জানান বিজ্ঞানীরা।

কার্বন ডেটিং পরীক্ষায় জীবাশ্মগুলোর বয়স নির্ধারণ করে বিজ্ঞানীরা জানান, কেওডব্লিউ সোয়াম্পের নমুনা ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার বছর বয়সী ছিল। যেখানে নাকুরি খুলি প্রায় ১১ হাজার বছর এবং কুবল ক্রিকের দেহাবশেষ প্রায় ১৪ হাজার বছর বয়সী ছিল।

এগুলোর তুলনায় চহুনা জীবাশ্মটিকেই বেশি প্রাগৈতিহাসিক করে তোলে। ওই সময়কার আদিম ও প্রাচীন মানুষের খুলি আবিষ্কৃত হয়েছে আফ্রিকাজুড়ে। নৃ-বিজ্ঞানীরা বরং গবেষণার জন্য অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে আফ্রিকার জীবাশ্ম বেশি গ্রহণ করেন, যেখানকার মানুষেরা দীর্ঘদিন আগে থেকেই বিবর্তিত হয়েছে। যেমন, ১৯২০ সালে আফ্রিকায় ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন বছর বয়সী মানুষের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।

তবে চহুনা খুলি পরিষ্কারভাবে অস্বাভাবিক ছিল এবং তার ব্যতিক্রমী আকৃতির ব্যাখ্যা করা কঠিন ছিল।

মানুষের মস্তিষ্কের খুলি

আবার, কয়েক দশক ধরে প্রাগৈতিহাসিক চহুনা খুলি ও এর মতো অন্যান্য মানুষের বিবর্তনীয় গবেষণায় গবেষকদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দেখা যায়, আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স তাহলে কোথা থেকে এসেছে? কারণ, হোমো স্যাপিয়েন্সরা অদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান ওই জীবাশ্মগুলোর চেয়েও অনেক পুরনো। আধুনিক মানুষের সব বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ১ লাখ ৬০ হাজার বছর আগের খুলির শিলাও পাওয়া গেছে।

অস্ট্রেলিয়ান খুলির বয়স তাই এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে। কারণ, তাদের স্বাতন্ত্র্যসূচক ঢালু কপাল ও বিশিষ্ট ললাট ঢালের বৈশিষ্ট্য থেকে সহজেই একে প্রাচীন মানব প্রজাতি হোমো ইরেক্টাস বলে চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা, যারা ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ২ লাখ বছর আগে বাস করতো। তবে কিভাবে অস্ট্রেলিয়ার খুলির সঙ্গে এই দীর্ঘদিন আগে বিলুপ্তি প্রজাতির মিল দেখা দিল?

এর উত্তরেও কিছু গবেষক একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা হাজির করেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ তত্ত্ব প্রমাণে হোমো ইরেক্টাসদের ১০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় বেঁচে থাকতে হবে। আর তারা প্রমাণ পেয়েছেন যে, অস্ট্রেলিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ইরেক্টরা ছিল। এমনকি আজকের ভূমিপুত্রের পরিচায়কও তারা।

ওই সময়কালেই হোমো ইরেক্টাসরা তাদের অদ্ভুত খুলি তৈরির প্রমাণ দিয়ে ধীরে ধীরে কর্মপ্রক্রিয়া সম্পাদন করছিল। তাদের ফ্ল্যাট কপাল নিজেদের হাতেই পরিবর্তিত হয়েছে বলেও জানান নৃ-বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।