ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

খুলি পরিবর্তন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বিবর্তন-অভিযোজন তত্ত্বকেই!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
খুলি পরিবর্তন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বিবর্তন-অভিযোজন তত্ত্বকেই! খুলি পরিবর্তন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বিবর্তন-অভিযোজন তত্ত্বকেই!/ছবি: সংগৃহীত

প্রাগৈতিহাসিক অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির কিছু মানুষ তাদের নবজাতক সন্তানদের মাথার খুলি নিজেরাই পরিবর্তন করে ফেলতো।

দেশটিতে পাওয়া অদ্ভুত আকৃতির চহুনা খুলির জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণায় এর প্রমাণ অনেক আগেই মিলেছে। এখন গবেষকরা বলছেন, আমাদের নিকট আত্মীয় শিম্পাঞ্জি, উল্লুক ও বনমানুষেরাও তাদের বাচ্চাদের খুলি সংশোধন করতে পারে বা করে।

আর এ কৃত্রিম অঙ্গবিকৃতি প্রবণতার প্রমাণ আমাদের উদ্ভব-অভিযোজন সংক্রান্ত প্রচলিত তত্ত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।  

তবে অধিকাংশ নৃ-বিজ্ঞানী একমত যে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে খুলির এই স্বপ্রণোদিত বিবর্তন মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসকে বদলে দেবে না। কিন্তু এ পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে, তারা তাদের অদ্ভুত চেহারা করতে প্রাকৃতিক বিবর্তনের গণ্ডিতে বন্দি না থেকে মানবিক বিবর্তনের পথনির্দেশক ও ঋণী হতে চেয়েছিল।

গবেষণা করে জানা গেছে, ১২ মাস বয়স হলে শিশুদের অঙ্গবিকৃতি ঘটাতেন ইরেক্ট প্রাপ্তবয়স্করা। আমাদের খুলি এ সময়কালে নরম থাকে। বাবা বা অন্য প্রাপ্তবয়স্করা বোর্ড, ব্যান্ডেজ বা নিয়মিত মাথা মালিশ ব্যবহার করে তার মাথার বৃদ্ধির নির্দিষ্ট আবক্র পথ নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরিণামে বড় হতে হতে ওই অদ্ভুত লম্বাটে আকৃতি পেতো মাথার খুলির।

কিন্তু কেন এই কষ্টকর পরিবর্তন? নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে, সৌন্দর্য ও সামাজিক সম্ভাবনার উন্নতি, পুরুষদের আরো বেশি পুরুষালি চেহারা গঠন, মাথার নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্যই খুলির পরিমার্জন করতেন ৯ থেকে ১৪ হাজার বছর আগের ওই মানুষেরা।

সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফ জোলিকোফের বলেন, ‘বনমানুষদের (ওরাংওটাং বা উল্লুকও) বাচ্চাদের খুলিও জন্মের পর আমাদের মতোই নরম থাকে। তাদেরও মস্তিষ্কের বৃদ্ধির অধিকাংশই ঘটে জন্মের পর এবং প্রাথমিক বৃদ্ধির হার বাড়তে থাকে জীবনের প্রথম কয়েক বছরের মধ্যে। ফলে তারাও খুলি সংশোধনের এ কৌশলগত ও সাংস্কৃতিক ক্ষমতাধারী এবং সমানভাবে অঙ্গবিকৃতি প্রবণ’।
 

প্রায় ২ মিলিয়ন বছর আগে থেকে মস্তিষ্ক বড় হতে শুরু করে মানুষের। আর এর ধারাবাহিকতায় ১ মিলিয়ন বছর আগে থেকে উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা ছেড়ে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে হোমো ইরেক্টাসরা। বিবর্তন ও অভিযোজনের এ দুই ধারায়ই  আমরা হোমো স্যাপিয়েন্সরা পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব নিতে পেরেছি বলে এর আগে জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এ ধারণাকে আমাদের প্রজাতির উৎপত্তির ‘মাল্টিরিজিওনাল তত্ত্ব’ বা ‘চরম আউট অব আফ্রিকা’ বলা হয়।


অথচ বনমানুষ এবং শিম্পাঞ্জি- উল্লুকসহ আমাদের আত্মীয়দের কিছু প্রজাতির আমাদের চেয়েও বড় মস্তিষ্ক আছে। আবার এরাও যেহেতু নিজেদের খুলি পরিমার্জনে সক্ষম সেহেতু জোলিকোফের মনে করেন, ‘মাল্টিরিজিওনাল তত্ত্ব’ ছাড়াও সরাসরি আধুনিক মানুষের উৎপত্তির অন্যান্য প্রধান ধারণা এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, আফ্রিকার বাইরে যাওয়ার এ তত্ত্ব প্রমাণ করে যে, আমাদের প্রাচীন প্রজাতি ইরেক্টাস আফ্রিকা, ইউরেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া বসবাসকারী জনগোষ্ঠী থেকে বিবর্তিত হয়েছে। আবার আধুনিক মানুষও আফ্রিকায় জন্ম নিয়ে ৬০ হাজার বছর আগে সেখান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

অথচ আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে মস্তক পরিবর্ধনের প্রথম প্রমাণ মিলেছিল ৪৫ হাজার বছর বয়সী নিয়ান্ডারথাল মানুষদের কিছু খুলিতে। কিন্তু তাদের অস্বাভাবিক আকৃতি সমানভাবে কবরে হাড় ভাঁজের কারণেও হতে পারে। এছাড়া চীনের বেইজিং এর কাছাকাছি পাওয়া ২০ হাজার বছর বয়েসী খুলিও পরিবর্তন করা হতে পারে। কিন্তু এর দেহাবশেষ হারিয়ে গেছে ও সে খুলির বয়স নিয়েও প্রশ্ন আছে।

তাই, অস্বাভাবিক অস্ট্রেলিয়ান খুলি প্রশ্ন তৈরি করছে যে, নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক হোমো ইরেক্টাস্‌ ছাড়া অন্যদের কেন এ ধরনের মস্তক আকৃতি হয়নি। আর তাদের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েও আমরা কেন আলাদা?

বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।