ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জঙ্গিবাদের জিকিরে প্রভাবিত অস্ট্রেলীয় দল

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
জঙ্গিবাদের জিকিরে প্রভাবিত অস্ট্রেলীয় দল ড. আসাদুজ্জামান রিপন

ঢাকা: কয়েকজন মন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে জঙ্গিবাদের জিকিরে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল প্রভাবিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

সোমবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেসবিফ্রিংয়ে তিনি এ দাবি করেন।



বিএনপির সহদফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন স্বাক্ষরিত সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ড. রিপন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশে জঙ্গিবাদের জিকির তুলেছিলেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি ধরা, তথাকথিত উগ্রবাদী বই-পুস্তক উদ্ধারের যে কাহিনী সময়ে সময়ে প্রচারিত হয়েছে,তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি আস্থাহীনতা ও আশঙ্কার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা প্রশ্নে যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমরা একমত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষও মনে করে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো তৎপরতা নেই। বাংলাদেশ ধর্মীয় সহনশীল একটি রাষ্ট্র। এখানে ধর্মীয় উগ্রবাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

প্রেসব্রিফিংয়ে ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সোমবার অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ‘নিরাপত্তা নেই’ এ কথা বলে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সে দেশের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক অধিদফতর ডিএফএটি বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায় তারা।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মুখপাত্র রিপন বলেন, আমরা মনে করি, বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিনা ভোটের সরকার তাদের শাসন ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা এবং অনতিবিলম্বে জনগণের অবাধ ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবিকে অস্বীকার করে ‘ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে ঠেকানোর জন্য এ সরকার ব্যস্ত’ এমন ধারণা দিয়ে পশ্চিমাদের সহানুভূতি নেওয়ার একটি অপচেষ্টা লক্ষ করা গেছে।

তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলেছি, এ ধরনের প্রোপাগান্ডা এক পর্যায়ে দেশের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বাস্তবে হয়েছেও তাই।

প্রেসব্রিফিংয়ে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর নতুন ইমেজে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছক কষছে এবং নিজেদের সর্বোত্তম পারফর্মান্স (ক্রীড়া নৈপুণ্য) প্রদর্শনে উজ্জীবিত।

কিন্তু যখন দিনক্ষণ, ভেন্যু সবকিছু ঠিকঠাক তখন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিরাপত্তার প্রশ্নে অনিশ্চিত হওয়ায় আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে এবং ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমরা  খুব দুঃখ পেয়েছি।

তিনি বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত দেশ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, আমরা আবারও উল্লেখ করতে চাই, বাংলাদেশ নিয়ে অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক অধিদফতরের দেওয়া পর্যবেক্ষণ প্রকৃত তথ্যভিত্তিক নয়- এটা আমাদের বিশ্বাস।

ড. রিপন বলেন, আমরা আশা করবো, বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে সরকার সচেতন থাকবে এবং এর বিপরীতে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টিতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।

অস্ট্রেলিয়ার পর্যবেক্ষণকে ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষের বাংলাদেশ বিষয়ক পর্যবেক্ষণ যদিও আমরা বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মনে করি, তথাপিও দেশের মানুষের মধ্যেও এর ফলে এক ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে।

সরকারকে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. রিপন বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে শুধু বিদেশিদের নয়, দেশের মানুষকেও আশ্বস্ত করার দায়িত্ব সরকারের।

অস্ট্রেলীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাবি করে তিনি বলেন, অস্ট্রেলীয় সরকারের বাংলাদেশ বিষয়ক এই পর্যবেক্ষণে কারণে ধর্মীয় সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রশ্ন উঠে এসেছে। সে কারণে অবিলম্বে এ ধরনের নেতিবাচক ধারণার বাইরে বাংলাদেশকে নিয়ে এসে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করা দরকার। এজন্য সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।
 
এ জন্য বাংলাদেশে সুশাসন, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, দেশে  শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির অবাধ চর্চায় বাধা না দেওয়া, সরকারি দল, বিরোধীদলের মধ্যে গণতান্ত্রিক আচরণ, সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা এবং অনতিবিলম্বে দেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহনণ একটি অবাধ নির্বাচনের আয়োজনের দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।

ডা. রিপন বলেন, আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী রাষ্ট্রে কখনোই কোনো ধরনের উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিতে পারে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
বিজ্ঞপ্তি/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।