ঢাকা: কেন্দ্র থেকে বেধে দেওয়া সময় বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়ে গেলেও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি উত্তরবঙ্গের জেলা বিএনপির ইউনিটগুলো।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় ১৮টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে এখন পর্যন্ত একটি ইউনিটও ‘সম্পূর্ণ’ পুনর্গঠিত হয়নি।
বেশিরভাগ জেলাতে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছোট জেলাগুলোতে কাজ হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।
আবার যেসব জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন মামলায় কারাগারে ছিলেন বা গ্রেফতারের ভয়ে ছিলেন আত্মগোপনে, সেসব জেলায় এখনো শুরু হয়নি কমিটি পুনর্গঠনের কাজ।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় কমিটি পুনর্গঠন থমকে আছে। এসব জেলায় কমিটি পুনর্গঠনে কে বা কারা নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়ে চলছে রশি টানা-টানি।
দু’একটি জেলায় আবার কমিটির মেয়াদ (৩ বছর) উত্তীর্ণ না হওয়ায় কেন্দ্র থেকে পাঠানো কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ সম্বলিত চিঠি আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
উত্তরবঙ্গের ১৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ১২টির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় গত ১২ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় চিঠি পাঠান দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান।
ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-উপজেলা-পৌরসভায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন করে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় ওই সিঠিতে।
তৃণমূলের পুনর্গঠিত কমিটি হাতে পাওয়ার পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বসে জেলা সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করার কথা ছিল কেন্দ্রীয় বিএনপির।
কিন্তু মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের ১৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে একটি জেলাও ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-উপজেলা-পৌরসভার পুনর্গঠিত কমিটি কেন্দ্রে পাঠাতে পারেনি।
বরং নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়ে বাড়তি সময় চেয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপিকে চিঠি দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। কমিটি পুনর্গঠনের জন্য আরো অন্তত এক মাস সময় চেয়েছেন তারা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, বেধে দেওয়া সময় যদি অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে আরো সময় দেওয়া হবে। তবে সবারই চেষ্টা থাকতে হবে, বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরুই হয়নি। গত ১২ আগস্ট কেন্দ্র থেকে যখন চিঠি পাঠানো হয়, তখন চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সূত্রমতে কেন্দ্রের চিঠি হাতে পাওয়ার পর মির্জা ফখরুলের অনুপস্থিতিতে তারই ছোট ভাই জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মির্জা ফয়সাল কয়েকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সভা করেন। কিন্তু ৫টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ হাত দিতে পারেননি তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি। আগামী ৪ অক্টোবর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে জেলা বিএনপির সভা হবে। তার পর আমরা কাজ শুরু করবো।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর নিজ জেলা লালমনিরহাটেও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়নি। জেলা বিএনপির সভাপতি পদ আগলে রাখা আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভার একটিও পুনর্গঠন করতে পারেননি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা মঙ্গলবার বাংলানিউজকে বলেন, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কাজ গুছিয়ে ফেলেছি। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে উপজেলা ও পৌরসভার কাজে হাত দেবো। আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নিজ জেলা নাটোরেও কমিটি পুনর্গঠন শুরু হয়নি। ৭টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত নাটোর জেলা বিএনপি পুনর্গঠন আদৌ হবে কি-না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌনে ৬ বছরের পুরনো কমিটির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বিভিন্ন মামলায় আসামি হওয়ায় বেশিরভাগ সময় থাকছেন কারাগারে। আবার মুক্তি পেলেও যেতে পারছেন না এলাকায়। সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হকও গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন।
রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মঙ্গলবার বাংলানিউজকে বলেন, এলাকায় যেতে পারছি না, কমিটি পুনর্গঠন করবো কীভাবে? এবার নাটোর জেলা বাদ দিয়েই দল পুনর্গঠন করতে হবে বিএনপিকে।
এদিকে ৫টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত জয়পুরহাট জেলা বিএনপিও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারেনি। স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ, হামলা-মামলা-গ্রেফতারের কারণেই তাদের এই পিছিয়ে পড়া।
জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান মঙ্গলবার বাংলানিউজকে বলেন, আমি এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান দু’জনেই জেলে ছিলাম। এজন্য কাজ শুরু করতে পারিনি। কেন্দ্রে চিঠি দিয়ে আমাদের সমস্যার কথা জানিয়ে দিয়েছি।
উত্তরবঙ্গ বিএনপির সবচেয়ে বড় সাংগঠনিক জেলা দিনাজপুরেও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি। ১৩টি উপজেলা ও ৭টি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত এ সাংগঠনিক জেলায় ২০ ইউনিটের মধ্যে একটির কাজও সম্পন্ন হয়নি। তবে অক্টোবরের মধ্যেই কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা বিএনপির নেতারা। এরই মধ্যে সময় চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছে তারা।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, নানাবিধ সমস্যার কারণে আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে আশা করছি, অক্টোবর মাসের মধ্যেই কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে পারবো।
তবে রংপুর, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি পুনর্গঠনের কাজ ৬০-৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব জেলার বাকি কাজ শেষ হলে অক্টোবরের মাঝামাঝি জেলা সম্মেলন করতে পারবে তারা।
এদিকে নীলফামারী জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরো এক বছর অবশিষ্ট থাকায় কেন্দ্রের দেওয়া চিঠি আমলে নিচ্ছে না। পঞ্চগড় জেলা বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় কমিটি পুনর্গঠন থমকে আছে। পাবনা জেলা বিএনপি পুনর্গঠনে আরো সময় চেয়ে পাঠিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি পুনর্গঠনের কাজ চলছে ঢিমেতালে। রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা কারাগার থেকে ফিরে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
এজেড/এএসআর