ঢাকা: কেন্দ্র থেকে বেঁধে দেওয়া সময় বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শেষ হলেও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ কিছুই করতে পারেনি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা বিএনপির বেশিরভাগ ইউনিট।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় ১৪টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে কেবল ফেনী, বান্দরবান ও নোয়াখালী জেলায় ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর কমিটি পুনর্গঠন করতে পেরেছে স্থানীয় বিএনপি।
উপজেলা, পৌরসভা ও থানা ইউনিটগুলোতে সম্মেলন করে অক্টোবরের মাঝা-মাঝি জেলা সম্মেলনের কথা চিন্তা করছে তারা।
বাকি ৮টি জেলার ১১টি জেলা ইউনিটের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা কারাগারে ও গ্রেপ্তারের এড়াতে আত্মগোপনে থাকায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি। শীর্ষ নেতারা জেল থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব নয় বলে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৪টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ৯টির সভাপতি-সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় গত ১২ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় চিঠি পাঠান।
ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির ইউনিটগুলোতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন করে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে।
তৃণমূলের পুনর্গঠিত কমিটি হাতে পাওয়ার পর জেলা বিএনপি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বসে জেলা সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করার কথা ছিল কেন্দ্রীয় বিএনপির।
কিন্তু, ১ অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ১৪ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে একটি জেলাও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভার পুনর্গঠিত কমিটি কেন্দ্রে পাঠাতে পারেনি।
নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়ে বাড়তি সময় চেয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপিকে চিঠি দিয়েছেন জেলা বিএনপি সভাপতি-সেক্রেটারিরা। কমিটি পুনর্গঠনের জন্য আরো অন্তত দুই মাস সময় চেয়েছেন তারা।
তবে কেন্দ্র থেকে অনধিক এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে চলতি অক্টোবরের মধ্যেই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, নানাবিধ কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কমিটি পুনর্গঠন করতে পারেনি, তাদেরকে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত সময়ের মধ্যেই কমিটি পুনর্গঠন হবে বলে আমরা আশা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করতে পারেনি। ১১টি সাংগঠনিক ইউনিটে সভা করে কমিটি পুনর্গঠনের জন্য যে সাংগঠনিক সক্ষমতা প্রয়োজন তা এই মুহূর্তে নেই কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা (উত্তর) জেলা বিএনপি সভাপতি খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার জেলে থাকায় এবং কায়কোবাদ দেশের বাইরে অবস্থান করায় আমরা কাজই শুরু করতে পারিনি। উনারা ফিরলেই কাজ শুরু করব।
কুমিল্লা উত্তরের মত দক্ষিণ জেলা বিএনপির অবস্থাও একই রকম। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা বিএনপি সভাপতি শওকত মাহমুদসহ স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা কারাগারে ও গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে থাকায় কুমিল্লা দক্ষিণ বিএনপি কমিটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো একখানে বসতেই পারছি না, কমিটি করব কীভাবে। আমার সেক্রেটারি এলাকায় আসতে পারছেন না। যুবদল, ছাত্রদল সভাপতি সেক্রেটারিরা গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় কমিটি পুনর্গঠন কীভাবে করব?
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপিও কমিটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে পারেনি। ৭টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ১টি থানাসহ মোট ১৩টি ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত বিএনপির সাংগঠনিক জেলা চট্টগ্রাম দক্ষিণ’র দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আরো দুই মাস সময় চেয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে চিঠি পাঠিয়েছেন।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপি নেতাদের পাঠানো ওই চিঠির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় বিএনপি তাদের জন্য আরো এক মাস সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। এই এক মাসের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. মহিউদ্দিন শুক্রবার (২ অক্টোবর) বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কাজের জন্য এক জায়গায় মিলিত হলেই পুলিশ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কমিটি পুনর্গঠন দুরূহ ব্যাপার। কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়ে দুই মাস সময় চেয়েছি। আমাদের এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এর মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব।
এদিকে দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার বিএনপিও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারেনি। এ জেলায় ৮টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় মোট ১২ সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে বিএনপির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট কেন্দ্রের চিঠি পাওয়ার পর ওয়ার্ড, ইউনিয়নে কাজ শুরু করে কক্সবাজার জেলা বিএনপি। কিন্তু ‘সহিংস আন্দোলন’র সময় বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজে স্বাচ্ছন্দে অংশ নিতে পারছেন না তারা। ফলে পিছিয়ে গেছে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় স্বাচ্ছন্দে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। আন্দোলন সংগ্রাম তো করতেই দেয়নি। দল পুনর্গঠনে বাধা আসছে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীতে কমিটি পুনর্গঠন অনেকটা শেষ করে ফেলেছে স্থানীয় বিএনপি। ৬টি উপজেলা ও ৫ পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত বিএনপির এই সাংগঠনিক জেলার নেতারা এখন অপেক্ষায় আছেন খালেদা জিয়ার। তিনি দেশে ফিরলেই জেলা সম্মেলন করতে চান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দীন মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই আমরা কাজ শেষ করে ফেলেছি। ম্যাডাম ফিরলেই জেলা সম্মেলন করে ফেলব।
চট্টগ্রাম বিভাগের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ তেমন এগোয়নি। তবে বান্দারবান জেলা বিএনপির পুনর্গঠন কিছুটা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বান্দরবানের ৭টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভার কাজ শেষের দিকে রয়েছে। আগামী দুই সপ্তার মধ্যে জেলার ৯টি সাংগঠনিক ইউনিটের কাজ সম্পন্ন করে কেন্দ্রে চূড়ান্ত ফাইল পাঠানোর ব্যাপারে আশাবাদি বান্দরবান জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা বিএনপি সভাপতি সাচিং প্রু জেরী বাংলানিউজকে বলেন, কাজ ঠিক-ঠাক মতই এগুচ্ছিল। তবে মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার কারণে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। আশা করছি, আগামী দুই সপ্তার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।
এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের জন্য তৃণমূলে চিঠি দিলেও নিজ জেলা নোয়াখালীতে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে পারেননি জেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান।
তবে ঈদের পুরো সময়টা নোয়াখালীতে অবস্থান করে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ গুছিয়ে ফেলেছেন তিনি। ৯টি উপজেলা ও ৬টি পৌরসভাসহ মোট ১৫টি সাংগঠনিক ইউনিটের কাজ দ্রুত শেষ করে শিগগিরই জেলা সম্মেলন করার ব্যাপারে আশাবাদী মোহাম্মদ শাহজাহান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুক্রবার বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নিজে উপস্থিত থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলার কাউন্সিল করছি। ফেয়ার কমিটির গঠনের জন্য সময় বেশি লাগছে। আশা করি অক্টোবর মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৫
এজেড/জেডএম