ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ: সমঝোতাতেই কাণ্ডারী নির্ধারণ!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ: সমঝোতাতেই কাণ্ডারী নির্ধারণ!

ময়মনসিংহ: অজুত ব্যর্থতার দায়ভার মাথায় নিয়েই দিন পাঁচেক আগে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলামসহ ৮ নেতা।

তাদের বিদায়ের পর নতুন কমিটির নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন সংগঠনটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।



এদিকে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে জীবন-বৃত্তান্ত চাইলেও বরাবরের মতো এবারও সমঝোতার মাধ্যমেই জেলা ছাত্রলীগের নতুন কাণ্ডারী নির্ধারণ হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।  

তারা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিবাদমান দু’পক্ষের সমঝোতাতেই এবারও এ কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর সমঝোতার বদলে দু’পক্ষ জটিল সমীকরণে পৌঁছালে জেলার তরুণ সংসদ সদস্যদের (এমপি) একটি বলয়ও সুযোগ বুঝে কমিটিতে ‘ভাগ’ বসানোর কাজটি সারতে পারেন- এমন গুঞ্জনও ডালপালা মেলছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে।

রাজনীতির মাঠে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ‘টার্ম কার্ড’ হিসেবে বিবেচিত এ কমিটি নিজেদের কব্জায় রাখতে দু’পক্ষ ছক কষাও শুরু করেছে বলে জানান তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আগামী ১৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ময়মনসিংহ যাচ্ছে। জেলা কমিটির পদ-প্রত্যাশীরা তাদের কাছে বায়োডাটা জমা দেবেন। এরপর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১ জুন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের ৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম এ কমিটির মাধ্যমে জেলার রাজনীতিতে ‘চমক’ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু ‘চমক’ কমিটির নেতারা নিজেদের আর মেলে ধরতে পারেননি।

কমিটি গঠনের পরও পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা, বছর ঘুরলেও বর্ধিত সভা না হওয়া, আধিপত্য কিংবা ভাগ-বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ছাত্রলীগের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং ভালুকা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কসহ বিভিন্ন কারণে কমিটির বয়স উত্তীর্ণ হবার অভিযোগে বিলুপ্ত করা হয় জসিম-রকিবের কমিটি।

এরপর থেকেই জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয় জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে। নড়েচড়ে বসেন জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিবাদমান দু’পক্ষও। এ দু’পক্ষের নিয়ন্ত্রক দুই আওয়ামী লীগ নেতা। একজন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু এবং অন্যজন ধর্মমন্ত্রীর ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত।

সূত্রমতে, এ দুই পক্ষের মতামত ও সমঝোতার ভিত্তিতেই নতুন কমিটি গঠিত হবে। তাদের বাইরে নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনা নেই। জসিম-রকিব কমিটি বিলুপ্ত হবার পর পরই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের খবর ছড়িয়ে পড়লেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন ফুৎকারে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ এ কমিটির আকার হবে ২ থেকে ৫ সদস্যের। ’

দলীয় সূত্র জানায়, গত দু‍ইবারের মতো এবারও প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে পারেন মোহিত উর রহমান শান্ত। গত দু’ কমিটিতেও তার প্রভাব ছিল লক্ষ্যণীয়।

শেষ কমিটিতে তিনি সভাপতি হিসেবে নেতৃত্বে এনেছিলেন জসিম উদ্দিনকে। তবে রাজনীতির জটিল হিসাব-নিকাশের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার পরিবার থেকেও তিনি নেতৃত্ব উঠিয়ে আনতে পারেন।

ফলে তার সমর্থিতদের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে শান্তর চাচাতো ভাই শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রাজ্জাক উষাণ ও বিদায়ী জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সব্যসাচীর নাম।

নিজের অবস্থান শক্ত করতেই দুই ভাইয়ের একজনকে তিনি বেছে নিতে পারেন, এমন আলাপচারিতা সর্বত্রই।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক‍াধিক নেতা বলেন, ‘প্রথম দিকে এ পক্ষ থেকে যার নাম বেশি আলোচনায় আসে। শেষ পর্যন্ত তারই ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। গত কয়েক কমিটি বিশ্লেষণ করে এমন মতামত দিয়েছেন তারা।

নেতারা-কর্মীরা জানান, এ পক্ষ থেকে জেলা ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেন রিফাত ও জাকির হোসেনসহ আরও কয়েকজনের নাম আলোচনায় আসছে।

অন্যদিকে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটুর গ্রুপ থেকে এ দুই পদে প্রার্থী হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে শহর ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন আরিফ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম রকিব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় সরকার, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশেল আহমেদ অনি, আশফাক আল রাজি ও রুবেল আহমেদের নাম।

গত কমিটির সময় জেলার তরুণ এমপিদের সমর্থন পেয়েছিলেন রকিব। মেয়র গ্রুপের পাশাপাশি আবারও তাদের সমর্থন মিললে ফের তার নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে বিগত কমিটিতে গ্রুপিং রাজনীতির বঞ্চনার শিকার শহর ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন আরিফকে নেতৃত্বে আনতে পারে মেয়র পক্ষ। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ ছাত্র নেতা বিগত সম্মেলনে ‘রেকর্ড’ শোডাউন করে সাড়া জাগিয়েছিলেন। ওই সময়ে সম্মেলনস্থলে ‘আরিফ হাওয়া’ বইলেও নষ্ট গ্রুপিং রাজনীতির বলি হতে হয় তাকে।

আবার অনেক ‘বড় নেতার’ মাথাব্যাথার কারণও কিন্তু এ আরিফ, এমনটি মনে করে একটি সূত্র জানায়, কমিটি এ সমীকরণে গড়ালে ‘কর্মী বান্ধব’ এ নেতার আবারো ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। তবে গতবারের পুনরাবৃত্তি এবারো হলে দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ বিস্ফোরণের আশঙ্কাও অনেকেরই।

এদিকে, তরুণ এমপিদের গ্রুপ থেকেও শোনা যাচ্ছে সদ্য বিদায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাফিউল আদনান প্রিয়মেরও নাম। ৩ তরুণ এমপি’র একজন ফুলপুরের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদের ঘনিষ্ঠ, পরিচ্ছন্ন ইমেজের এ ছাত্রলীগ নেতা সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য ফাতেমাতুজ জোহরা রানী ও শহর আ’লীগ সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম তারার ছেলে।

অবশ্য দলীয় একটি সূত্র মনে করে, জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবেন দু’পক্ষের দুই নেতা টিটু ও শান্ত। তাদের সঙ্গে আবার সু’সম্পর্ক রয়েছে তরুণ এমপিদের। জেলার রাজনীতিতে প্রভাব না থাকলেও ক্ষমতার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ তরুণ এমপিরা যে কোনো এক পক্ষকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই সমর্থন দিতে পারেন, এমন গুঞ্জনও ভেসে বেড়াচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।