ঢাকা: স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিএনপি।
সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিস্ময় প্রকাশ করেন দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
সোমবার স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
রিপন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়করণ সরকারের একটি অসৎ পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই না।
তিনি বলেন, আমরা বিস্মিত হয়েছি, কারণ আমরা ক’দিন আগে সরকারের এ ভাবনার খবর জেনে প্রতিবাদ করেছিলাম এবং দাবি তুলেছিলাম-এ বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যেন সংশ্লিষ্ট সকল মহলের মতামত যাচাই করা হয়।
কিন্তু সরকার আমাদের সে দাবিকে পাশ কাটিয়ে একগুঁয়েমি মনোভাব প্রদর্শন করে আজ এ সংক্রান্ত পাঁচটি আইনের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন করেছেন।
দলের এ মুখপাত্র বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করা প্রসঙ্গে আজ এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে অর্ধেক নারী জনপ্রতিনিধি দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিরোধীতা করেছেন। আমরাও মনে করি, এর ফলে স্বত:প্রণোদিত ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ হ্রাস পাবে।
আমরা এর আগে বলেছি, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্র-সমাজ ব্যবস্থা-এতোটাই রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত এবং নির্বাচন ব্যবস্থা এতোটা ত্রুটিপূর্ণ -যেখানে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র-সমাজ আরো বেশি বিভাজিত হয়ে পড়বে। তাছাড়া, বর্তমান নতজানু ও সরকারের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ভোটারদের অবাধে ভোট দেওয়ার অধিকার রক্ষা করতে সমর্থ নন। দলবাজ প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবাহী হিসেবে সরকারের নীল নকশার বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে অক্ষম।
এ পরিস্থিতিতে দলীয় প্রতীকে ভবিষ্যতে যারা নির্বাচিত হবেন-তাদের কাছ থেকে ভিন্ন মতাবলম্বীরা সহযোগিতা পাবেন না এবং বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হবেন ব্যাপকভাবে।
সম্পত্তির ওয়ারিশ নির্ধারণ, নাগরিক সনদ ও চারিত্রিক প্রত্যয়নপত্র সহ দৈনন্দিন সাধারণ নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে নাগরিকদের দলীয় পরিচয়ের কারনে ভোগান্তিরও এতে আশঙ্কা থাকবে।
রিপন বলেন, আমরা অস্বীকার করিনা উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অনেক দেশেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই করে থাকেন। কিন্তু সেসব দেশে আমাদের দেশের মত রাজনীতির অপচর্চা হয়না। সেখানে নিরপেক্ষ প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে। বাংলাদেশে এই চিত্র বিপরীত।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর বর্তমান সরকারের নৈতিক ভিত্তি যখন প্রশ্নবিদ্ধ এবং সকল দলের অংশ গ্রহনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচনের দাবি যখন সকল মহলের-তখন সে দাবিকে পাশ কাটিয়ে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের পেছনে সরকারের এক মহা-দুরভিসন্ধি কাজ করছে বলে আমরা মনে করি।
দলের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নির্বাচনী আইন অধ্যাদেশ জারি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান রিপন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
বিএস