ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ডেটলাইন-২০১৯

বিকল্প বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যাচ্ছেন তারা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
বিকল্প বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যাচ্ছেন তারা

ঢাকা: বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে সংসদে নিয়ে অন্তত আরও এক মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এক্ষেত্রে বর্তমান মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালেই নির্বাচন দেবে সরকারি দল।

আর ‘ঝামেলামুক্তভাবে’ পরের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে সংসদে একটি বিকল্প বিরোধী দল রাখতে চায় তারা। এজন্য তৃতীয় আরেকটি শক্তি বা জোটের উত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা এসব নেতা নিজ নিজ দল ও জোটকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছেন।

সূত্র মতে, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ক্ষমতায় থেকেই উদ্‌যাপন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাদের জিততেই হবে।
 
কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি ‘একতরফা’ নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তাই যেভাবেই হোক, বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে যেতে চায় তারা। এজন্য সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে যতোটুকু ছাড় দেওয়া সম্ভব, ততোটুকু ছাড় দিতে প্রস্তুত আছেন ক্ষমতাসীনরা।
 
তবে প্রচণ্ড চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে যতো দুর্বলই মনে করা হোক না কেন, নির্বাচনে অংশ নিলে ৬০/৭০টি আসনে জিতে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার মতো শক্তি তাদের আছে। নির্বাচন মোটামুটি নিরপেক্ষ হলে বিএনপির আসন সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে বিশ্বাস খোদ আওয়ামী লীগের।
 
তাদের শঙ্কা- বিএনপি যদি ৮০/৯০ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হয় এবং ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে পদত্যাগ করে, তাহলে বিরোধী দলহীন সংসদ নিয়ে বিপাকে পড়বে সরকার।
 
বহির্বিশ্ব থেকে তখন সরকারের ওপর চাপ আসবে আরেকটি নির্বাচনের জন্য। ফলে ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপন সম্ভব নাও হতে পারে আওয়ামী লীগের পক্ষে।
 
এ কারণেই সংসদে বিকল্প একটি বিরোধী দল রাখার পরিকল্পনা চলছে। এতে করে বিএনপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও বিকল্প বিরোধী দল হিসেবে তাদেরকে কাজে লাগানো যাবে।
 
সুদূরপ্রসারী এ পরিকল্পনা থেকেই ইসলামী ঐক্যজোটকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের করে আনা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করিম নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনকে দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অবারিত সুযোগ!
 
বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠা এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলুকেও যুক্ত করা হচ্ছে রাজনীতির এ নতুন মেরুকরণের সঙ্গে। বিকল্প বিরোধী দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব বর্তাতে পারে তার ওপর।  
 
সূত্র মতে, ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন- যেকোনো ইস্যুতে কয়েক লাখ লোক নিয়ে রাজপথ দখলের সক্ষমতা থাকায় ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আন্দোলনকে ১৫/২০টি এবং শেখ শওকত হোসেন নীলুকে ৫/৭টি আসন দিয়ে সংসদে নিতে পারলে সংসদ থেকে পদত্যাগের মাধ্যমে সরকারকে বিপাকে ফেলতে পারবে না বিএনপি।
 
অধিকন্তু দলগুলোর হাতে স্পর্শকাতর ইস্যু ধরিয়ে দিলে ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যমে রাজপথেও বিএনপির অভাব ভুলিয়ে দেবে।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনপিপি'র চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু বাংলানিউজকে বলেন, ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর করবেন না শেখ হাসিনা। আবার বিএনপির কাছেও জিম্মি হয়ে থাকবেন না। বিকল্প চিন্তা নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি বলা যাবে না।
 
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারের কি পরিকল্পনা আছে, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংসদ ও সংসদের বাইরে রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি’।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
এজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।