ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সাভারে এ কি করলেন আওয়ামী লীগের নেতারা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
সাভারে এ কি করলেন আওয়ামী লীগের নেতারা! সাভারে এ কি করলেন আওয়ামী লীগের নেতারা!-ছবি: বাংলানিউজ

সাভার: সাভারে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স বর্জন করলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। অনুষ্ঠান চলাকালে একযোগে শীর্ষনেতারা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

সরাসরি যুক্ত থাকায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীও দেখেন আসন শূন্য করে নেতাদের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের দৃশ্য। বিষয়টিকে অবমাননাকর ও দৃষ্টিকটু বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া সাধারণ নেতাকর্মীরা।


 
বুধবার (০৩ মে) বেলা ১১টা থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী এবং সরকারের উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের পাঁচ জেলার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ছাড়াও বিভাগের প্রতিটি জেলার প্রত্যন্ত জনপদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সমাবেশ করে তা বড় পর্দায় সম্প্রচার করা হয়। ফলে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকা জেলাগুলোর আয়োজনের সব কিছুই দেখার সুযোগ ছিলো সকলের।
 
প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর থেকে শুরু করে টাঙ্গা‌ইল হয়ে কথা বলেন সাভারের মানুষের সঙ্গে। অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের বিশাল আয়োজন থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন একজন করে প্রধান শিক্ষক, তৈরি পোশাক শ্রমিক ও কলেজ ছাত্রী।
 
শেষ বক্তা কলেজ ছাত্রীর বক্তব্য শেষ না হতেই আসন ত্যাগ করতে থাকেন নেতারা। তখনো প্রধানমন্ত্রী সব দেখছিলেন।
 
গণভবনে থাকা সঞ্চালক অন্য জেলায় যুক্ত হলেও প্রধানমন্ত্রীসহ ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত সকলেই পর্দায় দেখতে পান নেতাদের চলে যাওয়া।
 
প্রথমে নিজের আসন ত্যাগ করেন সামনের সারিতে থাকা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তাকে অনুসরণ করেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক হাসিনা দৌলা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র আলহাজ আব্দুল গণি, ধামরাই পৌরসভার মেয়র আলহাজ গোলাম কবির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদসহ প্রথম সারিতে থাকা নেতারা।
 
তাদের আসন ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে অনুগত কর্মীরাও পিছু নেন এসব নেতাদের।

এ সময় হতভম্ব অবস্থায় দেখা যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানকে। ‘সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেখতে পাচ্ছেন। সবাই বসেন’- এভাবে নেতাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
এক সময় পুলিশের হস্তক্ষেপে আসন না পাওয়া মধ্যম ও নিন্ম সারির নেতাদের দ্রুত সামনের আসনগুলোতে বসিয়ে দেওয়া হলেও নেতাদের অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের দৃশ্যগুলো দেখা যায় সরাসরি।
 
বিষয়টিকে দু:খজনক মন্তব্য করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের ঘণ্টাখানেক বাকি থাকতেই নেতাদের এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। এটি অশোভন ও দৃষ্টিকটু’।
 
তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে সাভার পৌরসভার মেয়র আলহাজ আব্দুল গণি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘প্রশাসন নিজেদের প্রাধান্য দিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের আড়ালে রাখা হয়েছে। এমনকি যে ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স চলছিলো, তা কেবলমাত্র প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিকেই নিবদ্ধ ছিলো’।
 
‘আমরা খাটা-খাটুনি করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করলাম। আর কর্মকর্তারা নিজেদের হাইলাইটস্‌ করলেন- এটি মেনে নেওয়া যায় না’।
 
জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কোথাও এমন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি।
সাভারের কোন নেতা কিভাবে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেছেন, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখেছেন’।
 
‘এটি এক ধরনের ধৃষ্টতা আর অবমাননাকর’ বলেও মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
 
গণভবনে থাকা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নেতারা যে আচরণ করেছেন, সেটি লজ্জার। তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী তাদের কার্যকলাপ দেখছেন’।

‘এ ঘটনা ঢাকা জেলার আয়োজনকে ম্লান করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।