ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

ইন্দোনেশিয়া থেকে জাহিদুর

প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ মায়ের সঙ্গে ফারহান গালিব কবির। ছবি: জাহিদুর রহমান

জাকার্তা (ইন্দোনেশিয়া) থেকে: বিশ্বমানের উচ্চ শিক্ষা, গভীর মূল্যবোধ আর মানবিক চেতনায় সুদূর প্রবাসে গড়ে উঠছে নতুন এক বাংলাদেশ। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার রঙিন স্বপ্ন বুকে বেড়ে উঠছে প্রবাসী বাবা-মায়ের প্রবাসী সন্তানরা। দেশ থেকে দূরে থেকেও এই প্রজন্মের চেতনা জুড়ে তাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন।

বাবা- মায়ের কর্মস্থলের সুবাদে দেশ থেকে দূরে থাকলেও দেশটা যেন তাদের হৃদয়েই আসন গেঁড়ে আছে। দেশকে উন্নত আর আধুনিক রাষ্ট্রের পর্যায়ে তুলে ধরতে দৃঢ় প্রত্যয়ী তারা।

দেশ প্রেমের চেতনায় তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় নিজেদের প্রস্তুত করছে নতুন প্রজন্ম।

তাদেরই একজন ফারহান গালিব কবির(১৬)। পড়ছে এখানকার গান্ধী মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। গ্রেড নাইনে। দেশে সর্বশেষ পড়েছে বিআইএসসি স্কুলে।

প্রথম দেখাতেই আক্ষেপ ঝরে ফারহান গালিব কবিরের কণ্ঠে।

দেশের স্কুলে প্রতিদিন গাওয়া হতো আমার সোনার বাংলা, জাতীয় সঙ্গীত। এখানে তো সেটা নেই। ‘খুব মিস করি আমার জাতীয় সঙ্গীত’- বলছিলো ফারহান গালিব কবির।

আত্মপ্রত্যয়ী এই কিশোরের কণ্ঠে এমন কথা শুনে গর্বে বুক ভরে ওঠে। ভিন্ন আবহ, সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠলেও পরিবারিক চর্চা আর মূল্যবোধ নিজের দেশ আর দেশের সংস্কৃতির।

মা ফারহানা কবির। বাবা মেজর জেনারেল আজমল কবীর। ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। দুই ভাই বোনের মধ্যে ফারহান গালিব কবির ছোট। বড় বোন তাসনিম ফাতেমা কবির। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে বাংলাদেশেই, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে(এমআইএসটি)। বাবার পথ ধরে প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সে।

তোমার স্বপ্ন কি?

‘প্রথম স্বপ্নটাই হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে পড়া। নইলে যোগ দেবো দেশরক্ষার মিশনে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। ’

এখানে কি মিস করো বেশি?

অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষকে। দেশের বন্ধুদের। বেশি মিস করি শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়তে পায়জামা-পাঞ্জারি আর টুপি পরে মসজিদে যাওয়াটা।

মুসলিম প্রধান দেশ হলেও এখানে সাপ্তাহিক বন্ধ শনি ও রোববার। তবে শুক্রবার সাধারণ পোশাকে স্কুলে গেলেও সেখানে জুম্মার নামাজ পড়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানায় গালিব।

সবসময় মাতৃভাষায় কথা বলতে না পারা নিয়েও কষ্ট রয়েছে গালিবের। তার ভাষায়-বাসাবাড়ি ছাড়া এই ভাষাটাকে খুব মিস করি। কারণ আমাদের এখানকার স্কুলে প্রথম ভাষা ইংরেজি। আর দ্বিতীয় ভাষা ফ্রেঞ্চ।

প্রবাসী শিক্ষার্থী তানভীর হাসান (১৩) ও শরিফুল ইসলামের (১০) সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

বাবার সঙ্গে তানভীর ও শরিফ।  ছবি: জাহিদুর রহমান

তানভীর ও লেভেল আর শরিফ পড়ছে গ্রেড সিক্সে। গান্ধী মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাবার চাকরির সুবাদে শেরপুরে জন্ম নেয়া এই সহোদর সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ইন্দোনেশিয়াতেই আছে।

বাবা আমান উল্লাহ। ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা।

ভবিষ্যতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় তানভীর। দেশেই পরিবেশ দূষণ রোধে কাজ করতে চায়। বর্জ্য থেকে তৈরি করতে চায় জ্বালানি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে করতে চায় পরিবেশবান্ধব দেশ।

বাবার কর্মস্থলের সুবাদে ভুটানে জন্ম নেয়া শরিফ সব সময় অনুভব করেন বাংলাদেশকে। মিস করে দেশে থাকা প্রিয় স্বজনদের। তার ইচ্ছে, উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরেই দেশ গড়া। প্রবাসী নতুন প্রজন্মের চোখেমুখে এমন প্রত্যয়ই খেলা করে।

** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা 
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।