ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

ইন্দোনেশিয়া থেকে জাহিদুর রহমান

একটি নামের অপমৃত্যু

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
একটি নামের অপমৃত্যু সেলিম হোসেন

জাকার্তা (ইন্দোনেশিয়া) থেকে: বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিলেন শাহীন। আদরের সেই নাম হারিয়ে গেছে বহু আগেই। সেলিম হোসেন নামের আড়ালেই চাপা পড়ে রয়েছে শাহীনের আসল নামটি। এখন সেলিম হোসেন (৪০) নামেই সবাই চেনে তাকে।

প্রবাসে টিকে থাকার লড়াই আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দু'দশক ধরে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন তিনি। তবে নাম বিসর্জনের এই কষ্ট এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় শাহীনকে।

নামটা সেলিম ধারণ করলেও মনে-প্রাণে তো শাহীন। ‘আয়নাবাজী’ ছবির মতো আয়নার সামনে দাঁড়ালে কার চেহারা ভাসে? কোন সত্ত্বাকে তিনি লালন করেন, শাহীন নাকি সেলিমকে?

‘অবশ্যই শাহীনকে। পরিচয়টা তো সেলিমের কিন্তু সত্ত্বাটা একান্তই শাহীনের। ’

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় নাম বিসর্জনের সেই গল্পটাই বাংলানিউজকে জানাচ্ছিলেন শাহীন।

ভাগ্য অন্বেষণে ১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন শাহীন। পর্যটক ভিসায় গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের পর হয়ে গেলেন অবৈধ। তারপর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে ‘গলাকাটা’ পাসপোর্ট সংগ্রহ করলেন। পার্সপোর্টের আসল মালিক সেলিম। ছবির জায়গায় বসলো শাহীনের ছবি। সেই থেকে শাহীন হয়ে গেলেন সেলিম।

বিয়েতে ‘কবু্ল’ বলেছেন সেলিম নামে। ব্যাংকের হিসেব খোলা থেকে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স- শাহীন নামকে সটকে দিয়ে সবখানেই কেবল সেলিম।

আর এভাবেই প্রবাসে এসে জীবন-জীবিকার তাগিদে অপমৃত্যু ঘটেছে বাবা-মায়ের আকিকা দেওয়া নাম শাহীনের।

মেহেরপুরের সিংহাটি গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে শাহীন। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়।

সততা আর পরিশ্রমে অল্প দিনেই তার কাজ নজর কাড়ে কর্তৃপক্ষের। দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করায় ভালো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ইন্দোনেশিয়া পাঠানো হয় তাকে। গত বছরের ১৫ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ায় আসেন শাহীন।

মালয়েশিয়ায় যেখানে পথে-ঘাটে চলতে গেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেখা মেলে, সেই তুলনায় ইন্দোনেশিয়ার চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন।

হাতে গোনা প্রবাসীরা থাকেন এখানে। যাদের সিংহভাগই বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত।

শাহীনও মোটা দাগে সেই তালিকায়। তাকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চমৎকার আবাসন, বছরে আসা যাওয়ার দু’টো টিকিট দেওয়া হলেও খাবার-দাবার নিয়ে বেশ কষ্টে রয়েছেন তিনি। তার ওপর মালয়েশিয়ার মতো কোনো প্রবাসী বাংলাদেশির দেখা না পাওয়ায় নিজেকে এক ধরনের নির্বাসিত বলে মনে হয়। মন খুলে কথা বলতে পারেন না। সময় কাটতে চায় না। এমন নানা আক্ষেপ ঝরে শাহীনের কণ্ঠে।

খাবারের হাহাকার থেকেই দেশের টানে বাংলাদেশে চলে যাই, জানান শাহীন।

জালান সুডিরমান এলাকায় রেসিডেন্ট নাপান ৬৫ তলায় লিফট সংযোজনের দায়িত্বে শাহীনদের কোম্পানি।

গোটা প্রতিষ্ঠানে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি। তবে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ সম্পর্কে চমৎকার ধারণা শাহীনের।

তিনি জানান, এখানকার মানুষগুলো ভালো। তাদের মধ্যে মানবতা আছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ আর মানুষদের প্রতি সম্মান জানায় তারা।  

ভালো বেতন পেয়েও নির্বাসিত জীবনে এটাই সান্ত্বনা শাহীন ওরফে সেলিমের।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
এসএনএস

** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা 
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।