ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

সারাদেশ

চাকরি স্থায়ীকরণে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সিমেবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
চাকরি স্থায়ীকরণে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সিমেবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মাসুদ।

সিলেট: চাকরি স্থায়ীকরণে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিমেবি) ভাইস চ্যান্সেলরকে (ভিসি) ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বেতন ও ভাতাবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে নগরের চৌহাট্টাস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ভিসিকে এই আল্টিমেটাম দেন তারা।

বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী মাসুদ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা অত্যন্ত সূচারুভাবে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য কোন সেশন জট হয়নি। সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন মুকুলের আশ্বাসে বিনা বেতন-ভাতায় কাজ করেছি। একটি দিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখিনি।

বক্তব্যে বলা হয়, সাবেক ভিসি তাদের চাকরি স্থায়ীকরণে একাধিকবার আশ্বাস দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৭ ও ২৬ জুন শূন্যপদের বিপরীতে পর্যায়ক্রমে দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু আজ অব্দি বিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এমতাবস্থায় চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয়েছে। একপর্যায়ে সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করে কাজে যোগ দেন তারা।  

কাজী মাসুদ আরও বলেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হলে সাবেক ভিসি এনায়েত ও রেজিস্ট্রার গা ঢাকা দেন। ভিসি এনায়েত স্বৈরশাসক হাসিনার ব্যক্তিগত চোখের চিকিৎসক ছিলেন। আর রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান ছিলেন এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও টিলাগড় গ্রুপের ক্যাডার। যে কারণে তারা লাপাত্তা হয়ে যান। একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে আন্দোলনরতরা ফ্যাসিস্টের দোসর ভিসি এনায়েত ও ফজলুর রহমানের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমান পদত্যাগে করতে বাধ্য হন।

২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর ভিসি ডা. এনায়েত হোসেন ক্যাম্পাসে ফেরার খবরে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে এসে তাদের চাকরি স্থায়ী ও বেতন ভাতার বিষয়ে ভিসির কাছে জানতে চেয়ে ভিসিকে অবরুদ্ধ করেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ১৫ দিনের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণসহ সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রাক্তন ভিসি। পরে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।  

কাজী মাসুদ জানান, ভিসির আশ্বাসের ১৫ দিনের ডেডলাইনের ১৪ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সিন্ডিকেটে ডিন অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামকে সভাপতি করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ইতোপূর্বে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃতদের চাকরি নিয়মিতকরণ ও বেতন-ভাতাদি প্রদান প্রসঙ্গে একটি সুষ্পষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সদস্যের মূল্যবান আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের গতিশীলতা আনয়নে আদালতের নির্দেশনা, আর্থিক ও প্রশাসনিক বিধি-বিধান, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশনা বিষযয়ে পর্যালোচনা করে মানবিক দিক বিবেচনায় বর্ণিত নিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রতিবেদন প্রদানে কমিটির সিদ্ধান্ত হয়।  

এমতাবস্থায় ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য’র  অনুমোদনক্রমে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তাতে আবেদন জমার শেষ সময় ছিল ১৯ ডিসেম্বর। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদনপত্র জমা দেন তারা। এরপর ২০ ডিসেম্বর ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।  

২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি আমরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তারা। পরীক্ষার বোর্ড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ছাড়াও বিএমঅ্যান্ডডিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন ।

চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারি যোগ দেন। গত ১৬ মার্চ উপাচার্যের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সাথে চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত উমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন বলে লিখিত পত্রের মাধ্যমে জানান। এরপরও তার অনুপস্থিতিতে ২৩ মার্চ বর্তমান ভিসি ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন।

কমিটির সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না হওয়ায় এ প্রতিবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ সিন্ডিকেটের পর থেকে উপাচার্য চৌহাট্টাস্থ কার্যালয়ে অফিস করেননি। তিনি আগের ভিসির রেখে যাওয়া স্বৈরাচার দোসরের মতালম্বী মানুষ দিয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।  

ভাইস চ্যান্সেলরকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে কাজী মাসুদ বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে তাদের দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করেন। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভাইস চ্যান্সেলরকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানান। এর ব্যর্থয় ঘটলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্লকেড কর্মসূচিসহ অন্যান্য কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হুঁশিয়ারি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতাবঞ্চিত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

 বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।