ঢাকা, সোমবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

সারাদেশ

মামা-মামি-মামাতো বোন হত্যায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
মামা-মামি-মামাতো বোন হত্যায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আপন মামা, মামি ও মামাতো বোনকে হত্যার দায়ে রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৬) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ রায় দেন।  

দণ্ডপ্রাপ্ত রাজীব কুমার ভৌমিক সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ ভৌমিক ও প্রমিলা রানী ভৌমিকের ছেলে। ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি আত্মগোপন করেছেন।  

আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হামিদুল ইসলাম দুলাল জানান, তাড়াশের আলোচিত তিন খুনের মামলায় একমাত্র আসামি রাজীবকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

২০২৪ সালের ২০ জানুয়ারি তাড়াশের গোপালজিউ মন্দিরের পাশের একটি ফ্ল্যাট থেকে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৫) ও মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির (১৫) গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত স্বর্ণা রানী সরকারের ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে মামলার একমাত্র আসামি রাজীব কুমার ভৌমিককে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।  

রাজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাবার মৃত্যুর পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন রাজীব। রাজীবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন বিকাশ। ব্যবসা করে রাজীব তার মামাকে ধাপে ধাপে লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু রাজীবের কাছে আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিকাশ। তিনি গত ২২ জানুয়ারি ওই টাকা সাতদিনের মধ্যে ফেরত দিতে রাজীবকে চাপ দেন এবং তার বোন অর্থাৎ রাজীবের মা প্রমীলা রানীকে ফোনে বকাবকি করেন। রাজীব টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে কষ্ট পাওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।  

খুনের বর্ণনায় রাজীব জানিয়েছেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন ২৭ জানুয়ারি সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি লোহার রড ও একটি হাঁসুয়া সংগ্রহ করেন। বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বাসায় আসতে চান। বিকাশ সরকার তাড়াশের বাইরে কাটাগারি বাজার এলাকায় ব্যক্তিগত কাজে ছিলেন। তিনি টাকা নিয়ে বাসায় এসে থাকতে বলেন। রাজীব যথারীতি বাসায় আসেন। মামি স্বর্ণা রানী তখন রাজীবকে কফি খাওয়ানোর জন্য তিনতলার বাসা থেকে নিচের দোকানে কফি আনতে যান। সেই সুযোগে রাজীব মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষির কক্ষে গিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তুষি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে তার মামি স্বর্ণা কফি কিনে বাসায় ঢুকলে তাকেও পেছন থেকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন রাজীব। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করার পর গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর মামি ও মামাতো বোন গোঙাতে থাকলে তাদেরও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। তিনজনের মৃত্যুর পর তাদের মরদেহ টেনে বেডরুমে রেখে প্রধান দরজায় তালা মেরে পালিয়ে যান রাজীব।  

পরে রাজীব ভৌমিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত শেষে রাজীবকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।  

ঘটনার ১৬ মাস পর রোববার বিকেলে এ দেন বিচারক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।