ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

‘এল ক্লাসিকো’তে রিয়ালকে উড়িয়ে দিলো বার্সা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
‘এল ক্লাসিকো’তে রিয়ালকে উড়িয়ে দিলো বার্সা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্বসেরা তারকাদের নিয়ে স্প্যানিশ দুই জায়ান্ট দল বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ মাঠে নেমেছিল ‘এল ক্লাসিকো’র যুদ্ধে। এ যুদ্ধে ৪-০ গোলের ব্যবধানে জিতেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বার্সা।

ফলে, পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটিও ধরে রাখলো মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের দলটি।

বার্সার হয়ে গোল করেন সুয়ারেজ, নেইমার আর ইনিয়েস্তা। ইনজুরি কাটিয়ে ম্যাচের ৫৭ মিনিটের মাথায় মাঠে নামেন প্রায় দুই মাস মাঠের বাইরে থাকা মেসি। অপরদিকে অনেকটা নিষ্প্রভ ছিলেন রিয়াল তারকা রোনালদো-বেল-বেনজেমা-রদ্রিগেজরা।

লা লিগার এ ম্যাচটি রিয়ালের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় আতিথ্য নেয় বার্সা। মেসিকে ছাড়া কাতালান দলটিতে শুরুর একাদশে কোচ লুইস এনরিক মাঠে নামান ক্লদিয়ো ব্রাভো, দানি আলভেজ, জেরার্ড পিকে, মাশচেরানো, জরদি আলবা, সার্জিও বাসকুয়েটস, সার্জি রবার্তো, ইভান রেকিটিচ, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, লুইস সুয়ারেজ আর নেইমারকে।

স্বাগতিক রিয়ালের কোচ রাফায়েল বেনিতেজ শুরুর একাদশে মাঠে পাঠান কেইলর নাভাস, দানিলো, রাফায়েল ভারানে, সার্জিও রামোস, জেমস রদ্রিগেজ, টনি ক্রুস, লুকা মদ্রিচ, গ্যারেথ বেল, মার্সেলো, করিম বেনজেমা আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো তারকাদের।

৯০ মিনিটের ম্যাচের প্রথম মিনিটেই এল ক্লাসিকোর উত্তাপ চোখে পড়ে। সার্জিও রামোসের কড়া ট্যাকলে মাটিতে লুটে পড়েন সুয়ারেজ। ষষ্ঠ মিনিটের মাথায় নেইমারের জোরালো শট রিয়ালের গোলবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

দারুণ গতিতে এগিয়ে চলা ম্যাচের দশম মিনিটে লুইস সুয়ারেজ বার্সাকে লিড পাইয়ে দেন। রিয়ালের ডিফেন্স চিড়ে সার্জি রবার্তো বল বাড়িয়ে দেন আগুয়ান উরুগুয়ের তারকাকে। ডানপায়ের জোরালো শটে রিয়ালের গোলরক্ষক নাভাসকে ফাঁকি দিয়ে স্বাগতিকদের জালে বল জড়িয়ে দেন বার্সা তারকা সুয়ারেজ। ফলে, ১-০ তে লিড নেয় কাতালানরা।

সময়ের সাথে সাথে ম্যাচের উত্তেজনাও বাড়তে থাকে। রিয়াল তারকারা কিছুটা পা চালিয়ে খেলতে থাকলেও নিজেদের ঘর গুছিয়ে খেলতে থাকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। ২৪তম মিনিটে সার্জি রবার্তো রিয়ালের ডি-বক্সের ২৩ গজ দূর থেকে আকাশ ছোঁয়া শট নেন। খেলার প্রথম ২৫ মিনিট ৬০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রাখে কাতালানরা।

২৭ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ পায় রিয়াল। অতিথি ডিফেন্ডারদের ভুলে বল পান রদ্রিগেজ। জোরালো শট নিলেও তা রুখে দেন বার্সা গোলরক্ষক ব্রাভো। একই মিনিটে কাতালানদের প্রথম বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন গত মৌসুমের ক্লাসিকোতে গোল করা জেরেমি ম্যাথিউ। পায়ে আঘাত পাওয়া আর্জেন্টাইন তারকা মাশচেরানোর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ম্যাথিউ।

মাঝমাঠের বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে চলা ম্যাচের ৩৮ মিনিটে ছোটো জটলা তৈরি করে গোল আদায়ের চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। বার্সার গোলরক্ষক উড়ন্ত বলের লাইন মিস করলেও এ যাত্রায় বার্সা ডিফেন্ডাররা বল ক্লিয়ার করেন।

৪০ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো লিড নেয় কাতালানরা। ইনিয়েস্তার অসাধারণ পাসকে কাজে লাগান ব্রাজিল তারকা নেইমার। রিয়ালের ডিফেন্ডাররা নেইমারকে অফসাইটের ফাঁদে ফেলতে চাইলেও দমে যাননি ব্রাজিল অধিনায়ক। বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় স্বাগতিকদের জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।

প্রথমার্ধে বাজে খেলা রিয়াল ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায়।

বিরতির পর শুরুতেই জোরালো শট নেন রদ্রিগেজ। এবারো তাকে হতাশায় ফেলেন বার্সার গোলরক্ষক ব্রাভো। চিলিয়ান এ তারকা ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন রদ্রিগেজের শটটি।

৫১ মিনিটে রিয়ালের ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে ফ্রি-কিক নেন নেইমার। তার উড়ন্ত শটটি দারুণ ভাবে প্রতিহত করেন রিয়াল গোলরক্ষক নাভাস। তবে, ৫৫ মিনিটের মাথায় কাতালানদের রুখতে পারেননি রিয়ালের তারকারা। নেইমারের বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে থামিয়ে দেওয়া বলে জোরালো শট নেন বার্সার দলপতি ইনিয়েস্তা। তাতেই রিয়ালকে তৃতীয় বারের মতো লজ্জায় পড়তে হয়।

৩-০ গোলে এগিয়ে থাকা বার্সাকে পরের মিনিটেই আরেকবার এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পান সুয়ারেজ। তবে, তার নেওয়া শটটি রিয়ালের গোলবারের পাশে জড়িয়ে যায়। ৫৫ মিনিটে রদ্রিগেজের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ইসকো। ৫৭ মিনিটের মাথায় মাঠে নামেন বার্সার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা ইভান রেকিটিচের বদলি হিসেবে দীর্ঘদিন পর ইনজুরি থেকে ফেরত মেসিকে নামান বার্সা কোচ। দুই মিনিট পর রিয়াল কোচ মার্সেলোকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান কারভাজালকে।

৬৭ মিনিটের মাথায় গোলবার লক্ষ্য করে শট নেন মেসি। তবে, তার শটটি রুখে দেন রিয়ালের তারকা ভারানে। ৭০ মিনিটে রোনালদো দুরন্ত গতিতে বার্সার ডি-বক্সে প্রবেশ করে শট নেন। পর্তুগিজ তারকা সামনে তখন বার্সার গোলরক্ষক ব্রাভো ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। ফাঁকায় থেকেও শট নিয়ে ব্রাভোকে পরাস্ত করতে পারেননি রোনালদো। ৭১ মিনিটে মেসি-সুয়ারেজের প্রচেষ্টায় কেঁপে উঠে রিয়ালের ডিফেন্স। মেসির ডিফেন্স চেড়া পাস থেকে রিয়ালের গোলবার লক্ষ্য করে শট নেন সুয়ারেজ। স্বাগতিকদের ডিফেন্ডাররাই অবশেষে বল ক্লিয়ার করতে সক্ষম হন।

৩-০ গোলের পরও যেন বার্সার গোলক্ষুধা এতোটুকুও কমেনি। মেসিকে দলে পেয়ে উজ্জিবীত কাতালানরা ম্যাচের ৭৩ মিনিটে আরেকবার এগিয়ে যায়। দলের চতুর্থ আর নিজের দ্বিতীয় গোল করেন সুয়ারেজ। জরদি আলবার বাড়ানো বল পান সুয়ারেজ। তার সামনে শুধু ছিলেন রিয়ালের গোলরক্ষক। পেছনে ছিলেন আরও তিন ডিফেন্ডার, পাশেই ছিলেন নেইমার। তবে, স্বাগতিক গোলরক্ষক নাভাসকে ফাঁকি দিয়ে নিজেই গোলটি করেন সুয়ারেজ। ফলে, ৪-০তে এগিয়ে যায় বার্সা।

৭৭ মিনিটে ইনিংস্তের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মুনির আল হাদ্দাদি। ৮৩ মিনিটে কারভাজালের ফাউলের কারণে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নেইমার। ফলে, হলুদ কার্ড দেখানো হয় রিয়াল তারকাকে। পরের মিনিটে আবারো নেইমারকে ফাউল করা হয়। পেছন থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দেওয়ায় ইসকোকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ফলে, দশজনের দলে পরিণত হয় রিয়াল।

৮৮ মিনিটে ৫-০ গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মুনির। নেইমারের কোনাকুনি শট থেকে বল পেয়ে ফাঁকায় থাকা নাভাসকে ফাঁকি দিয়েও বল পাঠিয়ে দেন গোলবারের বাইরে দিয়ে। ৯০ মিনিটে রোনালদোর জোরালো শট প্রতিহত করেন বার্সার গোলরক্ষক ব্রাভো।

ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ৪-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘণ্টা, ২২ নভেম্বর ২০১৫
এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।