ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পাহাড়ের বুকে দুইদিন এবং দুইরাত

জান্নাতুল ফিরদাউস রিনথী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
পাহাড়ের বুকে  দুইদিন এবং দুইরাত পাহাড়ের বুকে দুইদিন এবং দুইরাত

শত শত পাহাড়জুড়ে সবুজের দিগন্ত যেখানে বহুদূর গিয়ে আকাশের সঙ্গে এক হয়ে যায়, রাতে এক চিলতে জ্যোৎস্না হাতে নিয়ে চাপাতায় স্পর্শ করলে মনে হয় পৃথিবীটা এত সুন্দর কেন! ঠিক সেই স্থানটি হল সিলেট৷

বাংলাদেশের ভ্রমণের নানা স্থানের মাঝে সিলেট অন্যতম। কোলাহল ছেড়ে নিরিবিলিতে কিছুটা সময় উপভোগ করতে সিলেটের জুড়ি নেই৷ সবুজ পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে শান্তির ছোঁয়ায় মন স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ওঠে।

সিলেটে গিয়েই দেখা মেলে বিভিন্ন ধরনের হোটেল এবং রির্সোটের। নিজের পছন্দমত যেকোন একটি বেছে নিলেই শুরু হয়ে যায় নিশ্চিন্ত মনে ঘোরাঘুরি। জাফলং, বিছানাকান্দি, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, রাতারগুল, মালনীছড়া চা বাগানসহ মনোরম নানা স্থানে সমৃদ্ধ এ জেলা। আর চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল তো আছেই।

৪ জানুয়ারি, ২০২০ এ সিলেট পৌঁছে শহরের একটি স্বনামধন্য হোটেলে উঠলাম। দিনের বাকি সময়ে শহরটা টুকটাক ঘুরে দেখার পর ৫ জানুয়ারি সকাল সকাল মলনীছড়া চাবাগান এবং জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। সিলেট বিমানবন্দর সড়কের পাশে ১৫০০ একর জায়গা নিয়ে উপমহাদেশের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগানটি দাঁড়িয়ে আছে। ছায়াযুক্ত সবুজে ঘেরা চাবাগানটির পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম যেন চোখ ফেরানো দায়। কয়েকটি প্রবেশদ্বারের মাঝে প্রথমটি দিয়ে ঢুকে সংরক্ষিত এলাকাটি ঘুরে দেখার পর জাফলং যাওয়ার পালা।

সিলেট শহর থেকে ৬২কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জয়িন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত অসাধারণ পর্যটন এলাকাটি হল জাফলং। সীমান্তের ওপারে তাকালে ভারতীয় টিলা, ডাউকি পাহাড় এবং ছোট্ট শহর চোখে পড়ে। ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানি, অসংখ্য পাথর এবং জলপ্রপাত মন কেড়ে নেয় পর্যটকের। এ পাথরের ওপর জীবিকা নির্ভর করছে জাফলংয়ের হাজার হাজার মানুষ। এ এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের বাণিজ্য। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে শখের নানান জিনিসের কমতি নেই এখানে। প্রচুর খাবারের দোকানও চোখে পড়ার মত।

দীর্ঘ লম্বা সিঁড়ি পাড়ি দেয়ার পর নিচে নেমে জাফলংয়ের সৌন্দর্যে মন মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। স্বচ্ছ পানি স্পর্শ করলেই মন অজানা কোনো এক জগতে হারিয়ে যায়। অবশেষে জাফলং থেকে হোটেলে ফেরার মুহূর্ত চলেই এল।

৬ জানুয়ারি, ২০২১৷ ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পালা। সিলেট থেকে ভোলা গঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩কি.মি.। ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ট্রলারঘাটে পৌঁছানোর পর ট্রলার রিজার্ভ করে রওনা হতে হয় কাঙ্খিত সাদাপাথর জিরোপয়েন্টের উদ্দেশ্যে। নির্ধারিত ট্রলার ভাড়া ৮০০টাকা। মোটামুটি ১৫ মিনিট পর ট্রলার থামলে বালিতে নেমে হেঁটে পৌঁছাতে হয় চোখ আটকে থাকার মত স্থান সাদাপাথরে। এটি অনেকটা বদ্বীপের মত। ভোলাগঞ্জ সীমান্তে প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য উঁচু উঁচু পাহাড়৷ সেই উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা এবং ঢলের সঙ্গে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলেমিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছে৷ চারিদিকে তাকালে শুধু দেখা যায় সাদা পাথরের সমারোহ৷ ঠান্ডা পানিতে পা দিলে প্রশান্তিতে শরীর শিউরে ওঠে৷ চাইলে গোসল করে শরীর এবং মন দুটোই তৃপ্ত করা যায়৷ পোশাক বদলানোর ও খাবার খাওয়ারও সুব্যবস্থা আছে এখানে৷ প্রকৃতির সঙ্গে সুন্দর সময় কাটিয়ে গন্তব্যে ফেরার দিন চলেই এল৷ পাহাড়ের বুকে এ দুইদিন এবং দুইরাত ছিল জীবনের অন্যতম অধ্যায়৷

কর্মব্যস্ততার জীবনে প্রকৃতির সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো অনেকটা স্বর্গীয় অনুভূতির মত৷ সিলেটের সৌন্দর্যে যেকোন পর্যটক মুগ্ধ হতে বাধ্য৷ মনকে প্রকৃতির সঙ্গে আলিঙ্গন করার সুযোগ দিলে তবেই মন ও শরীর প্রাণশক্তি ফিরে পায়৷ সিলেটে পাহাড়ের বাঁকে ফিরে যেতে চায় মন বারে বারে৷ বাংলাদেশের সব পর্যটক এলাকার মাঝে সিলেটের খ্যাতি ও সৌন্দর্য দুটাই আকাশচুম্বী৷
আবারও যেন ফিরে যেতে পারি সে সৌন্দর্যের বুকে!

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২১
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।